মানব অ্যান্টিবডি-ভিত্তিক সর্পবিষের সর্বজনীন প্রতিষেধক আবিষ্কার: বিষবিজ্ঞানে যুগান্তকারী অগ্রগতি

সম্পাদনা করেছেন: Maria Sagir

২০২৫ সালের মে মাসে, আমেরিকান গবেষণা সংস্থা সেন্টভ্যাক্স (Centivax) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (National Institutes of Health)-এর সাথে যৌথভাবে একটি সম্ভাব্য বিপ্লবী সর্বজনীন প্রতিষেধক আবিষ্কারের ঘোষণা করেছে। এই নতুন ওষুধটি বিশ্বের উনিশটি (১৯) সবচেয়ে বিপজ্জনক সাপের বিষে থাকা টক্সিনগুলিকে কার্যকরভাবে নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গোখরা, তাইপান এবং ব্ল্যাক মাম্বার মতো মারাত্মক এলাপিড (Elapid) পরিবারের সদস্যরা। এই উদ্ভাবনটি ঐতিহ্যবাহী, সংকীর্ণ-পরিসরের সিরামগুলি থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে, কারণ প্রচলিত সিরাম প্রয়োগের জন্য সাপের প্রজাতি সঠিকভাবে শনাক্ত করা প্রয়োজন, যা জরুরি পরিস্থিতিতে প্রায়শই সম্ভব হয় না।

এই বৈজ্ঞানিক সাফল্যের মূল উপাদান ছিল মানব অ্যান্টিবডি ব্যবহার। এই অনন্য জৈবিক উপাদানের উৎস ছিলেন আমেরিকান হারপেটোলজিস্ট টিম ফ্রিড (Tim Friede)। প্রায় দুই দশক ধরে স্বেচ্ছায় বিষধর সাপের কামড় গ্রহণ করে তিনি যে আত্মত্যাগমূলক কাজ করেছেন, তা প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহে সহায়তা করেছে। নতুন এই যৌগটি মূলত সেই অ্যান্টিবডিগুলির সাথে ভ্যারেসপ্লাডিব (varespladib) নামক অণুর সংমিশ্রণে তৈরি, যা টক্সিনের বিস্তৃত পরিসরের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

ইঁদুরের উপর পরিচালিত পরীক্ষাগার পরীক্ষাগুলি এই ওষুধের উচ্চ কার্যকারিতা নিশ্চিত করেছে। এই প্রতিষেধকটি তেরোটি (১৩) প্রজাতির সাপের বিষের প্রাণঘাতী মাত্রা থেকে প্রাণীগুলিকে সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করেছে এবং অন্য ছয়টি (৬) প্রজাতির ক্ষেত্রে আংশিক সুরক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছে। এই বৈজ্ঞানিক অর্জন সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার কমানোর জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। উন্নয়নশীল অঞ্চলগুলিতে এটি এখনও একটি গুরুতর সমস্যা। অনুমান করা হয় যে প্রতি বছর সাপের কামড়ে ৮০,০০০ থেকে ১,৪০,০০০ মানুষ মারা যায় এবং প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়।

ঐতিহ্যবাহী অ্যান্টি-সিরাম তৈরির পদ্ধতির বিপরীতে, যা প্রাণীদের অনাক্রম্যতা (immunization) তৈরির উপর নির্ভর করে, মানব অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে তৈরি এই নতুন পদ্ধতি রোগীদের মধ্যে তীব্র অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, বিকাশকারীরা জোর দিয়ে বলেছেন যে নিজের উদ্যোগে এই প্রতিষেধক ব্যবহার করা বা স্ব-চিকিৎসা করা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। এই গবেষক দলের পরবর্তী পদক্ষেপ হলো অস্ট্রেলিয়ায় সাপের কামড়ে আক্রান্ত প্রাণীদের (যেমন কুকুর) উপর এই ওষুধের পরীক্ষা চালানো। এই ফলাফল নিশ্চিত হওয়ার পর, মানবদেহে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

উৎসসমূহ

  • Pravda

  • Московский комсомолец

  • Shazoo

  • Газета.Ru

  • Министерство здравоохранения РФ

  • Meduza

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।