যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ হিউস্টনের গবেষকরা ৬ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টির সূচনা বিলম্বিত করতে অ্যাট্রোপিন চোখের ড্রপের দৈনিক ব্যবহার কতটা কার্যকর তা নির্ধারণের জন্য একটি যুগান্তকারী জাতীয় গবেষণা পরিচালনা করছেন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (NIH) এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের জন্য মোট ২৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে।
এই ক্লিনিকাল ট্রায়ালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি অতিরিক্ত কেন্দ্রের সাথে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ হিউস্টনের মোট ৬০০ জনেরও বেশি শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অংশগ্রহণকারীদের দুই বছরের জন্য এলোমেলোভাবে ভাগ করে প্রতি রাতে একটি কম ঘনত্বের ০.০৫% অ্যাট্রোপিন দ্রবণ অথবা একটি প্লেসবো (placebo) ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। গবেষকদের অনুমান, অ্যাট্রোপিন ড্রপ মায়োপিয়া বিকাশের হার ২০% থেকে কমিয়ে ১০% এ আনতে সক্ষম হবে। এছাড়াও, অ্যাট্রোপিন চিকিৎসার মাধ্যমে মায়োপিয়ার পূর্ববর্তী চোখের বৃদ্ধি ৩০% পর্যন্ত ধীর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মায়োপিয়া একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশকে প্রভাবিত করে এবং এর প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ হলো, আগের প্রজন্মের তুলনায় শিশুদের বাইরের পরিবেশে কম সময় কাটানো। ডিজিটাল স্ক্রিনের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে কাছের জিনিস দেখার প্রবণতা মায়োপিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, প্রতিদিন স্ক্রিনের সামনে এক ঘণ্টা বেশি সময় কাটানো শিশুদের মায়োপিয়ার ঝুঁকি ২১% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
এই গবেষণাটি মায়োপিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য মাল্টিফোকাল কন্টাক্ট লেন্সের কার্যকারিতা নিয়ে পূর্ববর্তী গবেষণার উপর ভিত্তি করে তৈরি। ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির অপটোমেট্রির অধ্যাপক এবং এই গবেষণার সহ-প্রধান তদন্তকারী জেফরি ওয়ালিন বলেছেন, “মায়োপিয়া লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে, এবং যদি আমরা কেবল কয়েকজনের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করতে পারি, তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” গবেষকরা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস রোধে প্রাথমিক হস্তক্ষেপের কৌশলগুলির উপর জোর দিয়েছেন। এই গবেষণাটি বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে এবং ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণকারীদের নথিভুক্ত করা হবে, যার ফলাফল ২০২৭ সালে প্রত্যাশিত। এই গবেষণাটি শিশুদের চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।