চেক প্রজাতন্ত্রের পিলসেন (Pilsen) অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের উন্মোচন করেছেন, যা মধ্য ইউরোপের প্রাচীন কেল্টিক সভ্যতার প্রতি আমাদের ধারণাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। ষষ্ঠ থেকে প্রথম খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত এই ভান্ডারে প্রায় ৫০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, এবং স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জের অলঙ্কারাদি স্থান পেয়েছে। এই আবিষ্কারের গুরুত্ব কেবল এর বিপুল পরিমাণের জন্যই নয়, বরং এর অক্ষত অবস্থার কারণেও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এই মহৎ অনুসন্ধানের সূচনা হয়েছিল ২০২১ সালে, যখন একজন শৌখিন প্রত্নতাত্ত্বিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করে পিলসেনের নিকটবর্তী একটি মাঠে দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দের একটি স্বর্ণমুদ্রার ভগ্নাংশ খুঁজে পান। এই সূত্র ধরেই জাদুঘর ও কোষাগারের পরিচালক পাভেল কোডেরা (Pavel Kodera)-এর তত্ত্বাবধানে একটি নিবিড় অনুসন্ধান শুরু হয়। কোডেরা উল্লেখ করেছেন যে স্থানটিতে মূলত ছোট ধাতব বস্তু, বিশেষত মুদ্রা এবং অন্যান্য আকর্ষণীয় নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা সেই সময়ের মানুষের শিল্পবোধ ও বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি বহন করে। মুদ্রার গায়ে দেবদেবী, কৃষক, সূর্য এবং পৌত্তলিক দেবতাদের চিত্র খোদাই করা, যা হেলেনিস্টিক মুদ্রা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত।
এই স্থানটির বিশেষত্ব হলো, এটি এমন একটি বিস্তৃত জমিতে ছড়িয়ে আছে যা বহু শতাব্দী ধরে চাষের অধীনে রয়েছে এবং আজও কৃষিকাজ চলছে। এই কারণে খননকার্য কৃষিকাজের চক্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফসল তোলার পরে এবং বীজ বপনের আগে সম্পন্ন করতে হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মনে করছেন, এই স্থানটি হয়তো কোনো স্থায়ী বসতি ছিল না, বরং এটি একটি ঋতুভিত্তিক মিলনক্ষেত্র বা বাজার হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যেখানে লেনদেন বা ধর্মীয় আচারের জন্য মানুষ আসত এবং মুদ্রাগুলো হয়তো নৈবেদ্য হিসেবে সমর্পিত হয়েছিল অথবা হারিয়ে গিয়েছিল। ড্যানিয়েল স্ট্রানিক (Daniel Stráník) নামক প্রত্নতাত্ত্বিক উল্লেখ করেছেন যে এই মুদ্রার মধ্যে এমন কিছু নতুন ধরনের মুদ্রা রয়েছে যা পূর্বে নথিভুক্ত হয়নি, যা বোহেমিয়ার কেল্টিক মুদ্রা সংক্রান্ত বর্তমান ধারণাকে পরিবর্তন করতে পারে।
অন্যান্য বোহেমিয়ান কেল্টিক স্থানগুলোর বিপরীতে, এই স্থানটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লুণ্ঠনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে, যা এটিকে মধ্য ইউরোপে এক বিরল ও অনন্য অবস্থানে স্থাপন করেছে। এর সঠিক অবস্থান গোপন রাখা হয়েছে যাতে অবৈধ ধনসন্ধানীরা এর ক্ষতি করতে না পারে। আবিষ্কৃত সামগ্রীর মধ্যে স্বর্ণের পিণ্ড, কাটা টুকরা, এমনকি কাঁচা সোনার গুঁড়োও পাওয়া গেছে, যা সেই সময়ের সম্পদের প্রাচুর্যকে নির্দেশ করে। এছাড়া, ব্রোঞ্জের আংটা, পিন, ব্রেসলেট এবং একটি ক্ষুদ্র ঘোড়ার মূর্তি পাওয়া গেছে, যা সেই সময়ের কারুশিল্পের গভীরতা প্রমাণ করে।
এই অমূল্য নিদর্শনগুলোর একটি অংশ বর্তমানে মারিয়ানস্কা টিনিসে (Mariánská Týnice)-এর মিউজিয়াম অ্যান্ড ওয়েস্ট বোহেমিয়া গ্যালারিতে 'আনডিনায়েবেল রেফারেন্সেস টু সেল্টস ইন ওয়েস্ট পিলসেন' শিরোনামে প্রদর্শিত হচ্ছে। তবে, পাভেল কোডেরা জানিয়েছেন যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যতিক্রমী বস্তুগুলো সম্পূর্ণ গবেষণার মূল্যায়ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুরক্ষিত স্থানে রাখা হবে। এই আবিষ্কার কেবল প্রাচীন কেল্টিক জীবনযাত্রার উপর আলোকপাত করে না, বরং এটি এই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার দিগন্তকে প্রসারিত করার এক বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে, যা আমাদের সম্মিলিত অতীত সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি অর্জনে সহায়তা করবে।