তুরস্কের আয়ভালিক উপকূলে দশটি ভিন্ন স্থান থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা একশো আটত্রিশটি প্যালিওলিথিক সরঞ্জাম আবিষ্কার করেছেন, যা মানব ইতিহাসের বিস্তারের ধারণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে বরফ যুগে আনাতোলিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে সংযোগকারী একটি প্রধান অভিবাসন করিডোর হিসেবে এই অঞ্চলটি কাজ করেছিল। গবেষণাটি 'জার্নাল অফ আইল্যান্ড অ্যান্ড কোস্টাল আর্কিওলজি'-তে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি এই অঞ্চলের প্রাচীন মানব কার্যকলাপের প্রথম সুনির্দিষ্ট প্রমাণ। এই প্রত্নবস্তুগুলি মানব জনগোষ্ঠীর আনাতোলিয়া থেকে ইউরোপে বিস্তারের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
হাজেত্তেপে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ডঃ গোখনুর কারাহান, যিনি একটি সম্পূর্ণ তুর্কি নারী গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন, এই আবিষ্কারকে 'আবেগপূর্ণ এবং অনুপ্রেরণামূলক' বলে আখ্যায়িত করেছেন। বরফ যুগে সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ১০০ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে গিয়েছিল, যার ফলে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় সমভূমি উন্মুক্ত হয়েছিল যা বর্তমানে জলের নিচে। সেই সময়ে আধুনিক আয়ভালিকের দ্বীপপুঞ্জ ও উপদ্বীপগুলি আনাতোলিয়াকে ইউরোপের সাথে সংযুক্তকারী একটি সুবিশাল স্থলভাগের অংশ ছিল। বর্তমান উপকূল বরাবর প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুগুলি প্রমাণ করে যে মানুষেরা একসময় এই উন্মুক্ত অঞ্চলগুলিতে চলাচল করত এবং বসবাস করত। পূর্বে, দুর্বল সংরক্ষণ অবস্থা এবং পুরু পলল স্তর এই অঞ্চলে প্রাথমিক মানব কার্যকলাপের চিহ্ন আবিষ্কারে প্রধান বাধা ছিল।
আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাদরিয়ে এজেলিক ব্যাখ্যা করেছেন যে প্লাইস্টোসিন যুগের বিভিন্ন সময়ে বর্তমান আয়ভালিকের দ্বীপগুলি একটি বিস্তৃত ভূমির অভ্যন্তরীণ অঞ্চল হিসেবে বিদ্যমান ছিল। এই প্রাচীন ভূদৃশ্যের পুনর্গঠন ইঙ্গিত দেয় যে উত্তর এজিয়ান এবং আনাতোলিয়ার মধ্যে প্রাথমিক মানব চলাচলের রহস্য উন্মোচনে এই অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কঠিন সংরক্ষণ শর্ত সত্ত্বেও, দলটি লেভালোইস কৌশল ব্যবহার করে তৈরি সরঞ্জাম খুঁজে পেয়েছে, যা নিয়ান্ডারথাল এবং আদি আধুনিক মানুষের সাথে সম্পর্কিত মধ্য প্যালিওলিথিক প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য বহন করে। এই যুগের সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রত্নবস্তু, যেমন হাত কুঠার এবং সূঁচালো ফলাগুলিও উদ্ধার করা হয়েছে। ডঃ কারাহান উল্লেখ করেছেন যে এই বস্তুগুলি আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপকে সংযুক্তকারী বৃহত্তর সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত ঐতিহ্যের অংশ ছিল।
এই আবিষ্কারগুলি ইঙ্গিত দেয় যে আয়ভালিক আদিম মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিলন এবং বিনিময়ের কেন্দ্র ছিল। এই গবেষণা সেই সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করে যে মানুষ বলকান স্থলপথ ছাড়াও উত্তর এজিয়ান এবং আধুনিক তুরস্কের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সমুদ্র ও স্থল অতিক্রমণের মাধ্যমে আনাতোলিয়া থেকে ইউরোপে অভিবাসন করেছিল। ডঃ হ্যান্ডে বুলুত ইয়েতেপে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উল্লেখ করেছেন যে এই আবিষ্কারগুলি প্রাথমিক মানব বাসস্থান হিসাবে আয়ভালিকের দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনা নির্দেশ করে। লেভালোইস কৌশলটি প্রায় ২৫০,০০০ থেকে ৪০০,০০০ বছর আগে মধ্য প্যালিওলিথিক যুগে বিকশিত হয়েছিল এবং এটি মোস্তেরিয়ান পাথরের সরঞ্জাম শিল্পের অংশ, যা নিয়ান্ডারথাল এবং আধুনিক মানুষেরা ব্যবহার করত। ভবিষ্যৎ গবেষণায় প্রত্নতাত্ত্বিকেরা পুনরুদ্ধার করা সরঞ্জামগুলির বয়স ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের জন্য স্তরবিন্যাস খনন এবং নির্ভুল তারিখ নির্ধারণ সহ একটি আন্তঃবিভাগীয় পদ্ধতি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছেন। এই নতুন তথ্যের আলোকে, মানব ইতিহাসের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে আয়ভালিকের মতো অঞ্চলগুলির গুরুত্বকে নতুন করে মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।