একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর আবিষ্কারের ঘোষণা করেছে: পৃথিবী-আকারের তিনটি গ্রহ TOI-2267 নামে একটি ঘনিষ্ঠ দ্বৈত নক্ষত্রমণ্ডলকে প্রদক্ষিণ করছে, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ১৯০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি ২০২৫ সালের ২৪ অক্টোবর "অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স" (Astronomy & Astrophysics) জার্নালে বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে। দুটি নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া বোঝার জন্য এই আবিষ্কার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
TOI-2267 সিস্টেমটি মহাকর্ষীয়ভাবে অত্যন্ত চাপযুক্ত একটি পরিবেশ তৈরি করে, কারণ এর দুটি নক্ষত্র খুব কাছাকাছি থেকে একে অপরের চারপাশে আবর্তন করে। প্রচলিত জ্যোতির্বিজ্ঞানের ধারণা অনুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে স্থিতিশীল গ্রহীয় কাঠামো তৈরি হওয়া অসম্ভব। এই কারণে, স্বল্প কক্ষপথে আবর্তনকারী তিনটি পাথুরে গ্রহের সন্ধান পাওয়া গ্রহ বিবর্তনের প্রতিষ্ঠিত মডেলগুলিকে সরাসরি প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। গবেষকরা একটি অসাধারণ বিন্যাস লক্ষ্য করেছেন: দুটি গ্রহ একটি নক্ষত্রের সামনে দিয়ে ট্রানজিট করছে, এবং তৃতীয় গ্রহটি তার সঙ্গী নক্ষত্রের সামনে দিয়ে ট্রানজিট করছে। এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে TOI-2267 প্রথম পরিচিত দ্বৈত নক্ষত্রমণ্ডল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে উভয় নক্ষত্রের সামনে দিয়ে গ্রহদের ট্রানজিট করতে দেখা গেছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় নাসা-র টেস (TESS) উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং গবেষকদের দ্বারা তৈরি বিশেষ সফটওয়্যার শার্লক (SHERLOCK) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক, লিয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Liège) সেবাস্টিয়ান সুনিগা-ফার্নান্দেজ (Sebastián Zúñiga-Fernández), জোর দিয়ে বলেছেন যে এই সিস্টেমটি এত জটিল বিন্যাসে গ্রহ গঠনের বিদ্যমান মডেলগুলির সীমাবদ্ধতা যাচাই করার জন্য একটি অমূল্য পরীক্ষা ক্ষেত্র। সহ-লেখক ফ্রান্সিসকো জে. পোজুয়েলোস (Francisco J. Pozuelos) TOI-2267-কে চরম গতিশীলতার পরিস্থিতিতে পাথুরে গ্রহগুলির টিকে থাকার অধ্যয়নের জন্য একটি 'প্রাকৃতিক গবেষণাগার' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের মতে, এই আবিষ্কার গ্রহ বিজ্ঞানকে নতুন পথে চালিত করবে।
এর অনন্য স্থাপত্যের পাশাপাশি, TOI-2267 গ্রহসহ পরিচিত দ্বৈত নক্ষত্রমণ্ডলগুলির মধ্যে সবচেয়ে সংকুচিত এবং কিছু তথ্য অনুযায়ী শীতলতমও বটে। এই আবিষ্কার কেবল বহির্গ্রহের তালিকাকেই সমৃদ্ধ করে না, বরং কোন মহাজাগতিক বিন্যাসগুলি স্থিতিশীল জগতের অস্তিত্বকে সমর্থন করতে পারে, সেই ধারণাকেও প্রসারিত করে। ভবিষ্যতে, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের (JWST) সক্ষমতা ব্যবহার করে এই গ্রহগুলির বৈশিষ্ট্যগুলির বিস্তারিত বিশ্লেষণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তাদের ভর, ঘনত্ব পরিমাপ করা এবং সম্ভবত তাদের বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করা, যা এই বিরল গ্রহগুলির উৎপত্তি সম্পর্কে আরও গভীর তথ্য দেবে।
