NASA-এর অত্যাধুনিক সরঞ্জাম, বিশেষ করে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST), মহাজাগতিক বস্তুসমূহের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হাতে অভূতপূর্ব তথ্য সরবরাহ করেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পৃথিবী থেকে ৬২৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত CT Cha b নামক একটি তরুণ বহির্গ্রহকে ঘিরে একটি কার্বন-সমৃদ্ধ পরিগ্রহীয় চাকতি (circumplanetary disk) পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই মহাজাগতিক বস্তুটি সেই প্রক্রিয়াগুলি অধ্যয়নের জন্য একটি জীবন্ত গবেষণাগার হিসেবে কাজ করছে, যা কোটি কোটি বছর আগে আমাদের সৌরজগতে উপগ্রহ সৃষ্টির ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
CT Cha b হলো একটি সুপার-জুপিটার শ্রেণির গ্রহ, যার ভর আমাদের সৌরজগতের গ্যাসীয় দৈত্য বৃহস্পতি গ্রহের ভরের প্রায় ১৭ গুণ বেশি। গ্রহটি একটি টি টরি (T Tauri) নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে, যার বয়স মাত্র প্রায় ২ মিলিয়ন বছর। মহাজাগতিক পরিমাপে এই বয়স অত্যন্ত স্বল্প, যেখানে আমাদের সৌরজগতের বয়স ৪ বিলিয়ন বছরেরও বেশি। সময়ের এই বিশাল পার্থক্য বিজ্ঞানীদেরকে চাঁদের জন্ম প্রক্রিয়াকে প্রায় বাস্তব সময়ে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ করে দিয়েছে, যেন তারা মহাবিশ্বের সুদূর অতীতে উঁকি দিচ্ছেন।
এই গবেষণার মূল দিকটি হলো MIRI (মিড-ইনফ্রারেড রেঞ্জ) যন্ত্র ব্যবহার করে বর্ণালী বিশ্লেষণের মাধ্যমে চাকতিটিতে একাধিক জটিল অণুর উপস্থিতি শনাক্ত করা। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাসিটিলিন, বেনজিন, ডাইঅ্যাসিটিলিন, প্রোপিন, ইথেন এবং হাইড্রোজেন সায়ানাইড, সেইসাথে কার্বন ডাইঅক্সাইড। এই রাসায়নিক গঠন স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে উপগ্রহ গঠনের জন্য নির্ধারিত পদার্থে কার্বনের প্রাধান্য রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই পরিগ্রহীয় চাকতিটি তার মূল নক্ষত্র থেকে প্রায় ৭৪ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এবং এর রাসায়নিক গঠন নক্ষত্রকে ঘিরে থাকা চাকতি (circumstellar disk) থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। নক্ষত্রের চাকতিতে জলের প্রাধান্য থাকলেও কার্বন প্রায় অনুপস্থিত। এই বৈসাদৃশ্যটি মাত্র দুই মিলিয়ন বছরের মধ্যে সিস্টেমটির দ্রুত রাসায়নিক পুনর্গঠনের সাক্ষ্য বহন করে।
যদিও CT Cha b-এর চারপাশে এখনও কোনো উপগ্রহ স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি, তবুও বিজ্ঞানীরা এই উপাদানের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। ইউনিভার্সিটি অফ জুরিখের গ্যাব্রিয়েল কুগনো এবং কার্নেগি ইনস্টিটিউশন ফর সায়েন্সের সিয়েরা গ্রান্ট সহ গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন যে এই পদার্থের গঠন কোটি কোটি বছর আগে বৃহস্পতির বৃহৎ উপগ্রহ—যেমন আইও, ইউরোপা, গ্যানিমিড এবং ক্যালিস্টো—গঠনের জন্য অনুমিত উপাদানের অনুরূপ। এই পর্যবেক্ষণটি কেবল তাত্ত্বিক মডেল তৈরি করার পরিবর্তে গ্রহীয় সিস্টেমের জন্ম নিয়ন্ত্রণকারী ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলিকে সরাসরি অধ্যয়নের সুযোগ করে দেয়।
“দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স”-এ প্রকাশিত এই গবেষণাটি পরিগ্রহীয় পরিবেশের গতিবিদ্যা এবং রসায়ন বোঝার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই নবীন সিস্টেমে চাকতির কার্বন-সমৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা মূল্যবান দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন যে কীভাবে প্রাথমিক মহাজাগতিক পদার্থ থেকে জটিল কাঠামো তৈরি হয়। ওয়েব টিমের পরবর্তী লক্ষ্য হলো অন্যান্য তরুণ সিস্টেমগুলি অধ্যয়ন করা, যাতে প্রাপ্ত উপাত্ত তুলনা করে গ্রহ গঠনের সার্বজনীন নিয়মগুলি আরও সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায় এবং মহাজাগতিক রহস্যের জট খোলা যায়।
