ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (UMass Amherst) পদার্থবিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী গবেষণায় জানিয়েছেন যে, আগামী দশ বছরের মধ্যে কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাক হোল) বিস্ফোরণ ঘটার ৯০% সম্ভাবনা রয়েছে। এই গবেষণাটি মহাবিশ্বের ইতিহাস এবং মৌলিক কণা সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে।
স্টিফেন হকিং ১৯৭৪ সালে তাঁর তত্ত্বে উল্লেখ করেছিলেন যে কৃষ্ণগহ্বর কেবল পদার্থ শোষণই করে না, বরং কোয়ান্টাম প্রভাবের কারণে 'হকিং বিকিরণ' নামক কণা নির্গতও করে। এই প্রক্রিয়ায় কৃষ্ণগহ্বরের ভর ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং অবশেষে এটি একটি সুপারনোভা-সদৃশ বিস্ফোরণের মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে যায়। পূর্বে ধারণা করা হতো যে এই ধরনের বিস্ফোরণ প্রতি লক্ষ বছরে একবার ঘটে। তবে, UMass Amherst-এর গবেষকদের নতুন মডেল অনুসারে, বিশেষ করে অ্যাস্টেরয়েড আকারের আদিম কৃষ্ণগহ্বর (primordial black holes বা PBHs) অনেক কম জীবনকাল ধারণ করে।
গবেষকদের মতে, এই PBH গুলি একটি কাল্পনিক কণা, 'ডার্ক ইলেকট্রন', দ্বারা স্থিতিশীল থাকতে পারে, যা ব্যাখ্যা করে কেন তারা এখনও সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়নি। UMass Amherst-এর স্নাতক ছাত্র এইডান সিমন্স বলেছেন, "আমরা বিশ্বাস করি আগামী ১০ বছরের মধ্যে একটি PBH বিস্ফোরণ দেখার সম্ভাবনা ৯০% পর্যন্ত রয়েছে।" এই বিস্ফোরণ ঘটলে মহাবিশ্বের সমস্ত মৌলিক কণা, যেমন ইলেকট্রন, কোয়ার্ক, হিগস বোসন এবং ডার্ক ম্যাটারের মতো অনুমিত কণা সহ অজানা সকল কণার একটি সম্পূর্ণ তালিকা পাওয়া যাবে।
UMass Amherst-এর পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক মাইকেল বেকার ব্যাখ্যা করেছেন, "আমরা একটি ভিন্ন অনুমান করছি। আমরা দেখাচ্ছি যে যদি একটি আদিম কৃষ্ণগহ্বর একটি ছোট ডার্ক বৈদ্যুতিক চার্জ নিয়ে গঠিত হয়, তবে এটি চূড়ান্তভাবে বিস্ফোরিত হওয়ার আগে অস্থায়ীভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে।" এই নতুন মডেল অনুসারে, এই বিস্ফোরণগুলি প্রতি ১০ বছরে একবার ঘটতে পারে, যা পূর্বের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। এই গবেষণাটি Physical Review Letters জার্নালে ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন যে বর্তমান গামা-রে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলি এই ধরনের বিস্ফোরণ সনাক্ত করতে সক্ষম। যদি এটি ঘটে, তবে এটি কেবল PBH-এর অস্তিত্বই নিশ্চিত করবে না, বরং হকিং বিকিরণের প্রথম প্রত্যক্ষ প্রমাণও দেবে। এই আবিষ্কার মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং এর মৌলিক গঠন সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে এবং মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।