আলবার্ট আইনস্টাইন কর্তৃক এক শতাব্দীরও বেশি আগে ভবিষ্যদ্বাণী করা মহাকর্ষীয় তরঙ্গই হয়তো মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ, যেমন - নক্ষত্র, ছায়াপথ এবং গ্রহের সৃষ্টির মূল কারণ। সম্প্রতি ফিজিক্যাল রিভিউ রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত এক নতুন তত্ত্ব এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই গবেষণা মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
মহাবিশ্বের অভিন্নতা ব্যাখ্যা করার জন্য বিজ্ঞানীরা এতদিন ইনফ্লেশন মডেলের উপর নির্ভর করতেন। তবে এই মডেলে অনেক পরিবর্তনযোগ্য প্যারামিটার রয়েছে, যা এর যাচাইকরণকে কঠিন করে তোলে। নতুন তত্ত্ব অনুসারে, মহাকাশ-কালের স্বাভাবিক কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন, অর্থাৎ মহাকর্ষীয় তরঙ্গই পদার্থের ঘনত্বের ক্ষুদ্র পরিবর্তন ঘটিয়ে নক্ষত্র, ছায়াপথ এবং গ্রহের মতো কাঠামোর জন্ম দিয়েছে। গবেষকদের মতে, তাদের এই মডেল মহাবিশ্বের দ্রুত প্রসারণের জন্য দায়ী হাইপোথেটিক্যাল ইনফ্লেটন ফিল্ডের প্রয়োজনীয়তা দূর করে। পরিবর্তে, তারা প্রস্তাব করছেন যে মহাকাশ-কালের স্বাভাবিক কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন হিসেবে মহাকর্ষীয় তরঙ্গই ঘনত্বে এমন পরিবর্তন এনেছে যা মহাকাশীয় বস্তু সৃষ্টির দিকে পরিচালিত করেছে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই তত্ত্ব পরীক্ষা করা সম্ভব। মহাবিশ্বের বৃহৎ-পরিসরের গঠন পর্যবেক্ষণ এবং আদি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ পরিমাপ করে এই নতুন তত্ত্বকে নিশ্চিত বা বাতিল করা যেতে পারে। এই তত্ত্বটি মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের গুরুত্বকে আরও দৃঢ় করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, মার্চ ২০২৫-এ পদার্থবিদদের একটি আন্তর্জাতিক দল ঘোষণা করেছিল যে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা একটি ঘটনা—মহাকর্ষীয় স্মৃতি—পর্যবেক্ষণ ও নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি মহাকাশীয় ঘটনা, যেমন কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ থেকে মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণে রেখে যাওয়া একটি সূক্ষ্ম চিহ্ন, যা মহাবিশ্বের মহাকর্ষীয় তরঙ্গের প্রভাবকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরে।
এই নতুন গবেষণাটি মহাবিশ্বের গঠন এবং বিবর্তনে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ভূমিকাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার সম্ভাবনা রাখে। এটি মহাবিশ্বের আদিম অবস্থা বোঝার জন্য একটি সরল এবং যাচাইযোগ্য পদ্ধতির প্রস্তাব করে, যা পূর্বে ব্যবহৃত জটিল এবং অনুমান-নির্ভর মডেলগুলির একটি বিকল্প পথ খুলে দেয়। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, যা আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা কেবল মহাকাশ-কালের ঢেউই নয়, বরং মহাবিশ্বের মৌলিক কাঠামো গঠনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবেও কাজ করতে পারে।