মহাবিশ্বের প্রায় ৮৫% ভর ধারণকারী রহস্যময় কৃষ্ণবস্তু (dark matter) নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের শেষ নেই। সম্প্রতি, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের জ্যোতির্পদার্থবিদরা এক যুগান্তকারী গবেষণায় প্রস্তাব করেছেন যে, বৃহস্পতির মতো বিশাল এক্সোপ্ল্যানেটগুলিতে (আমাদের সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) কৃষ্ণবস্তু জমা হতে পারে এবং এর ফলে গ্রহের কেন্দ্রে ব্ল্যাক হোল তৈরি হতে পারে। এই গবেষণাটি ফিজিক্যাল রিভিউ ডি (Physical Review D) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকদের মতে, যদি কৃষ্ণবস্তুর কণাগুলি যথেষ্ট ভারী হয় এবং একে অপরের সাথে সংঘর্ষে ধ্বংস না হয়, তবে সময়ের সাথে সাথে সেগুলি গ্রহের কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হয়ে জমা হতে পারে। এই জমা হওয়া কৃষ্ণবস্তু একসময় সঙ্কুচিত হয়ে একটি ক্ষুদ্র ব্ল্যাক হোল তৈরি করতে পারে। এই ব্ল্যাক হোলটি ধীরে ধীরে পুরো গ্রহটিকে গ্রাস করে ফেলতে পারে, যার ফলে গ্রহটি নিজেই একটি ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে। এই তত্ত্বটি সুপারহেভি, নন-অ্যানিহিলেটিং ডার্ক ম্যাটার মডেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই মডেল অনুসারে, কৃষ্ণবস্তুর কণাগুলি অত্যন্ত ভারী এবং একে অপরের সাথে সংঘর্ষে ধ্বংস হয় না। এর ফলে, গ্রহের মহাকর্ষ বল দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে এই কণাগুলি গ্রহের কেন্দ্রে জমা হতে থাকে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের গবেষক মেহরাদ ফোরৌতান-মেহর এবং টারা ফেথেরোলফের মতে, বিভিন্ন আকার, তাপমাত্রা এবং ঘনত্বের গ্যাসীয় এক্সোপ্ল্যানেটগুলিতে এই ধরনের ব্ল্যাক হোল পর্যবেক্ষণযোগ্য সময়ের মধ্যে তৈরি হতে পারে। এমনকি একটি গ্রহের জীবনকালেও একাধিক ব্ল্যাক হোল তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই গবেষণাটি কৃষ্ণবস্তু অধ্যয়নের জন্য এক্সোপ্ল্যানেটগুলিকে প্রাকৃতিক পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যদিও বর্তমানে আমাদের প্রযুক্তি এত ক্ষুদ্র ব্ল্যাক হোল সনাক্ত করার জন্য যথেষ্ট উন্নত নয়, তবে ভবিষ্যতের উন্নত টেলিস্কোপ এবং মহাকাশ মিশনগুলি এই ধরনের সংকেত সনাক্ত করতে সক্ষম হতে পারে। যদি গ্রহ-ভরের ব্ল্যাক হোল আবিষ্কৃত হয়, তবে তা সুপারহেভি, নন-অ্যানিহিলেটিং ডার্ক ম্যাটার মডেলের পক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ সরবরাহ করবে এবং কৃষ্ণবস্তুর প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে। এই গবেষণাটি মহাবিশ্বের গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।