নেপাল বর্তমানে তীব্র বর্ষা পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে, যেখানে দেশের অনেক পাহাড়ি অঞ্চল এবং কিছু তরাই অঞ্চলে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কোশি, বাগমতি, গণ্ডকী, লুম্বিনি এবং সুদূরपश्चिम প্রদেশের কিছু নির্দিষ্ট স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্ষার নিম্নচাপ অক্ষরেখা বর্তমানে নেপালের তরাই অঞ্চল জুড়ে তার গড় অবস্থানের কাছাকাছি রয়েছে, যা এই সক্রিয় আবহাওয়ার পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। আজ রাতে, কোশি এবং তরাই অঞ্চলের কিছু অংশে, বিশেষ করে মাদেশ, লুম্বিনি এবং সুদূরপশ্চিম প্রদেশের কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সহ মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
নেপালের অর্থনীতি গ্রামীণ এলাকার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, এবং বর্ষার পারফরম্যান্স সরাসরি ভোগ্যপণ্যের চাহিদা এবং মূল্যকে প্রভাবিত করে। কৃষিখাত নেপালের জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশের জন্য দায়ী এবং দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৬০ শতাংশেরও বেশি এই খাতের উপর নির্ভরশীল। সময়মতো এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ফসলের রোপণ এবং ফলন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়, যা খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বন্যা ও ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিও বাড়ায়, যা অবকাঠামো এবং কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। গত বছর, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তীব্র বর্ষার কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে জিডিপির প্রায় ০.৮ শতাংশ ক্ষতি হয়েছিল, যার আর্থিক পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৬.৭ বিলিয়ন রুপি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষার ধরন আরও অনির্দেশ্য হয়ে উঠছে। এই বছর, নেপালের অনেক অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা একদিকে যেমন কৃষকদের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে দুর্যোগের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস বিভাগ জানিয়েছে যে লুম্বিনি, কার্নালি এবং গণ্ডকী প্রদেশের মতো কিছু অঞ্চলে অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি। এই পরিস্থিতিতে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকারগুলোকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক প্রস্তুতি জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় কমলা ও হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যা নদীর জলস্তর বৃদ্ধি এবং সম্ভাব্য বন্যার ইঙ্গিত দেয়। কাঠমান্ডু উপত্যকাও আজ বিকেলে মেঘলা আকাশ এবং বৃষ্টির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এখানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিকেল এবং সন্ধ্যার জন্য বৃষ্টির সম্ভাবনার হার ৬০ শতাংশ। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদান পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে উন্নত সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, উদ্ধার অভিযান এবং ত্রাণ কার্যক্রম। তবে, এই পরিকল্পনাগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি, যাতে বর্ষার প্রভাব থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা যায় এবং এই প্রাকৃতিক শক্তিকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়।