অক্টোবর ৩, ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া অবিরাম ভারী বর্ষণের ফলে নেপালে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। দেশটির জলবিদ্যা ও আবহাওয়া অধিদপ্তর অক্টোবর ২ তারিখে ৪ থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত আকস্মিক নদীর জলস্ফীতির উচ্চ ঝুঁকির বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে।
অক্টোবর ৫, ২০২৫ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই দুর্যোগে অন্তত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে, পাঁচজন নিখোঁজ এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন। কোশি প্রদেশ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে ইলাম জেলায় ভূমিধস ও বন্যায় ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে একাধিক জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, যা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। কর্তৃপক্ষ আরও বৃষ্টিপাত এবং একাধিক প্রদেশে ভূমিধসের সম্ভাবনার বিষয়ে সতর্ক করেছে।
এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে, নেপালের সরকার উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করেছে। প্রধানমন্ত্রী সুশিলা কার্কি বলেছেন যে সরকারি সংস্থাগুলি উদ্ধার ও ত্রাণকার্যের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তিনি জনগণকে প্রয়োজনে সহায়তা চাইতে দ্বিধা না করার আহ্বান জানিয়েছেন। রবিবার এবং সোমবার জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং জনগণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অক্টোবর মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, নেপালে এই সময়ে প্রায় ৮ থেকে ১৫ দিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকে। যদিও অক্টোবর মাস নেপাল ভ্রমণের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় মাস, তবে এই সময়ে বৃষ্টির কারণে ভ্রমণকারীদের প্রস্তুতি নিয়ে আসা উচিত।
ইলাম জেলায় ভূমিধসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই জেলায় ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভূমিধসের কারণে অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উদ্ধারকর্মীরা দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছেন। দেশের পরিবহন পরিকাঠামোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একাধিক জাতীয় সড়ক ভূমিধস ও বন্যার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কোশি হাইওয়ে, পৃথিবী হাইওয়ে (বিশেষ করে নারায়ানগড়-মুগলিং অংশ), বিপি হাইওয়ে, অরনিকো হাইওয়ে, সিদ্ধচরণ লোকমার্গ, কুলেখানি রোড এবং পাসং লামু হাইওয়ে উল্লেখযোগ্য।
কোশি নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং বাঁধের ৫৬টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতি ভারতের বিহার রাজ্যের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এই নদীটি সেখানেও বন্যার সৃষ্টি করে।
এই দুর্যোগের মোকাবিলায়, নেপালের সরকার রবিবার ও সোমবার দেশব্যাপী সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। জরুরি পরিষেবা এবং দুর্যোগ মোকাবিলাকারী দলগুলি এই ছুটির আওতামুক্ত থাকবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।