অক্টোবর ২০২৫-এর শুরুতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের কারণে সৃষ্ট বিধ্বংসী বন্যা দেশের চা শিল্পে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ৫% দার্জিলিং চা বাগান ধ্বংস হয়ে গেছে, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও পরিবেশের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। দার্জিলিং, ডুয়ার্স এবং তরাই অঞ্চলের অসংখ্য চা বাগান জলমগ্ন হয়েছে। দার্জিলিং-এ প্রায় ৮৭টি চা বাগানের প্রায় অর্ধেক ভূমিধস ও বন্যার কবলে পড়েছে, যার ফলে সেখানে চা উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ডুয়ার্স অঞ্চলের মেচপাড়া চা বাগান বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে বন্যার জল চা গাছ ও বাগান ধ্বংস করে দিয়েছে।
এই ভয়াবহ বৃষ্টিপাতের ফলে অন্তত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ভূমিধসের কারণে আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধারকার্য চলছে এবং শত শত আটকে পড়া পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চা শিল্পের উপর এই বন্যার অর্থনৈতিক প্রভাব অত্যন্ত গুরুতর, এবং এই পরিস্থিতিতে জরুরি সরকারি সহায়তার আবেদন জানানো হয়েছে। এই বিপর্যয় কেবল চা বাগানগুলিরই ক্ষতি করেনি, বরং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকেও ব্যাহত করেছে। অনেক চা শ্রমিক তাদের বাসস্থান হারিয়েছে এবং তাদের জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও সহায়তার প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। তাই, চা বাগানগুলির সুরক্ষার জন্য উন্নত জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং ভূমিধস প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়াও, বনভূমিকে চা বাগানে রূপান্তরিত করা মাটির ক্ষয় বৃদ্ধির একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে চা বাগানে বার্ষিক গড় মাটির ক্ষয় বনভূমির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এছাড়াও, স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং চা শ্রমিকদের সহায়তা করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় প্রয়োজন। ভারতের চা শিল্পের ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য এই পদক্ষেপগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শিল্প প্রতি বছর ১৭,৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০,০০০ টন চা উৎপাদন করে।