বিগত দুই দিনের বৈশ্বিক আবহাওয়ার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, গ্রহব্যাপী কোনো বড় ধরনের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়নি যা নিয়ে তাৎক্ষণিক বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এই সময়ে আবহাওয়ার স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি বজায় ছিল, যা গভীর পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছে। প্রধান মনোযোগ বর্তমানে সৌর কার্যকলাপের স্থিতিশীলতা, প্রধান ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলির বিকাশ এবং বৃহৎ পরিসরের খরা বা বন্যার ঘটনাগুলির উপর নিবদ্ধ রয়েছে।
পর্যবেক্ষণ অনুসারে, এই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সৌর শিখা বা করোনাল মাস ইজেকশন (CME) এর কোনো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেনি যা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। সৌর কার্যকলাপের এই শান্ত অবস্থাটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলীয় স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক। তবে, এই আপাত স্থিতিশীলতা সত্ত্বেও, বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ ও দাবানলের মতো ঘটনা আরও ঘন ঘন ঘটছে, এবং তাপ ও খরার সম্মিলিত ঝুঁকি আগুনের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সামগ্রিক প্রভাব হিসেবে পৃথিবীর গড় পৃষ্ঠের তাপমাত্রা শিল্প বিপ্লবের পূর্বের তুলনায় প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সামগ্রিক উষ্ণায়ন ঘূর্ণিঝড়কে আরও শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী করে তুলছে এবং বৃষ্টিপাতের ধরনকে ঘন করে বন্যার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, খরা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের সম্মুখীন একটি দেশ, যেখানে উজানের জলরাশির উপর নির্ভরতা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।
অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে বর্তমানে একটি নিম্নচাপ ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে, যা ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত। পরিবেশগত অবস্থা অনুকূল হওয়ায় এটি আজই একটি ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থার কারণে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ক্যারিবিয়ান সাগরের কিছু অংশে ভারী বৃষ্টিপাত এবং দমকা বাতাস বইতে পারে। এই পরিস্থিতির কারণে পুয়ের্তো রিকো, হিস্পানিওলা, জ্যামাইকা এবং কিউবার কিছু অংশে সপ্তাহের শেষের দিকে ভারী বৃষ্টি, বন্যা এবং প্রতিকূল সমুদ্র পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদিও কিছু অঞ্চলে মানুষের কার্যকলাপের কারণে পোড়া এলাকার পরিমাণ কমেছে, তবুও দাবানলের প্রকৃত বিপদ বিশ্বজুড়ে বাড়ছে। এই পর্যবেক্ষণগুলি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বাহ্যিক স্থিতিশীলতা সত্ত্বেও, দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতাগুলি সতর্কতার দাবি রাখে। এই শান্ত সময়টিকে বৃহত্তর কাঠামোগত পরিবর্তনগুলির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার এবং আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার দিকনির্দেশনা পুনর্বিবেচনা করার একটি মূল্যবান অবকাশ হিসেবে দেখা উচিত।