টাইফুন ফেংশেন, যা এই মৌসুমের দ্বাদশ প্রধান ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত, উপকূলীয় জনবসতির দিকে ধাবিত হওয়ার সাথে সাথে শক্তি সঞ্চয় করছে। এই ঘূর্ণিঝড় আঞ্চলিক দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা এবং সমন্বিত প্রস্তুতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সিস্টেমটির দ্রুত তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্বাভাসদাতারা এর শক্তিশালী গতিপথ পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রভাবিত অঞ্চলগুলিতে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
প্রাথমিক পূর্বাভাসে বাতাসের গতিবেগ বিউফোর্ট স্কেলে ১৩ থেকে ১৬-এর মধ্যে থাকার কথা বলা হয়েছিল, যা একটি দীর্ঘস্থায়ী, উল্লেখযোগ্য শক্তির ঝড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। তবে, সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ দিক থেকে আসা শিয়ারের কারণে ঝড়ের সংগঠনে কিছুটা বাধা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার (JTWC) তাদের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে। তারা জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঝড়ের সর্বোচ্চ তীব্রতা ১০০ কিমি/ঘণ্টা (৫৫ নট) হতে পারে, যার পরে দ্রুত দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
JTWC আরও পূর্বাভাস দিয়েছে যে সিস্টেমটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মোড় নিয়ে ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হবে। এটি সম্ভবত আগামী প্রায় ৬০ ঘণ্টার মধ্যে দা নাং-এর কাছাকাছি এলাকায় একটি দুর্বল ক্রান্তীয় ঝড় বা শক্তিশালী ক্রান্তীয় নিম্নচাপ হিসেবে ভূমি স্পর্শ করতে পারে। এরপর এটি দক্ষিণ লাওসের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সবচেয়ে গুরুতর হুমকিটি এখনও এর সাথে যুক্ত প্রবল বৃষ্টিপাত। যদিও পূর্বের পূর্বাভাসে ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথা বলা হয়েছিল, বিচ্ছিন্ন কিছু এলাকায় ২৭শে এবং ২৮শে অক্টোবরের মধ্যে ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই চরম বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে তুলে ধরে এবং গুরুতর বিপদের ঝুঁকি বাড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে আকস্মিক বন্যা, নিচু এলাকায় গভীর জলমগ্নতা এবং অস্থিতিশীল ভূখণ্ডে ভূমিধস।
এই ক্রমবর্ধমান হুমকির প্রতিক্রিয়ায়, কর্তৃপক্ষ ব্যাপক সম্পদ একত্রিত করছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানের জন্য বিশেষ সামরিক দল এবং শত শত ছোট ও মাঝারি আকারের নৌযান মোতায়েন করা হচ্ছে। উপরন্তু, যদি ঝড়টি উপকূলের কাছাকাছি আসার সময় তার বর্তমান তীব্রতা বজায় রাখে, তবে বন্যা বা ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকা ২,১০,০০০ (দুই লক্ষ দশ হাজার) পর্যন্ত বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা চলছে।
ঐতিহাসিক উদাহরণগুলি এই দুর্যোগের সময়কালের গুরুত্বকে তুলে ধরে। ২০১৯ সালের টাইফুন মাংখুট (Typhoon Mangkhut) ভূমি স্পর্শ করার পরে ধীর গতির কারণে দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয় ঘটিয়েছিল, যার ফলে দীর্ঘ বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় অবিরাম বন্যা দেখা গিয়েছিল। আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলির তথ্য নিশ্চিত করে যে, কমিউনিটি-পর্যায়ের প্রস্তুতি—বিশেষত সরবরাহ সামগ্রীর পূর্ব-অবস্থান এবং সরিয়ে নেওয়ার পথের স্পষ্ট যোগাযোগ—সাম্প্রতিককালে ব্যাপক মহড়া চালানো অঞ্চলগুলিতে জরুরি প্রতিক্রিয়ার সময়কে ৪০% পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হয়েছে।