পৃথিবীর ছায়া ব্যবহার করে ভিনগ্রহের অনুসন্ধানী যান সনাক্তকরণের নতুন পদ্ধতি
সম্পাদনা করেছেন: Uliana S.
বিজ্ঞানীরা মহাকাশে ভিনগ্রহের অনুসন্ধানী যানের উপস্থিতি সনাক্ত করার জন্য একটি অভিনব পদ্ধতির উন্মোচন করেছেন। এই পদ্ধতিটি পৃথিবীর ছায়াকে কাজে লাগিয়ে মহাকাশ বর্জ্য এবং উপগ্রহের হস্তক্ষেপকে এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে। সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা প্রস্তাবিত এবং পরীক্ষিত এই অত্যাধুনিক কৌশলটি মহাকাশ পর্যবেক্ষণে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বর্তমান মহাকাশ পরিবেশ হাজার হাজার উপগ্রহ এবং লক্ষ লক্ষ মহাকাশ বর্জ্যে পরিপূর্ণ, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য যেকোনো অস্বাভাবিক বস্তু সনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে। এই 'দূষণ' থেকে মুক্তি পেতে, গবেষকরা পৃথিবীর ছায়ার সুবিধা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রতিদিন রাতে পৃথিবী মহাকাশে একটি শঙ্কু আকৃতির ছায়া ফেলে, যেখানে সূর্যের আলো সরাসরি উপগ্রহ বা মহাকাশ বর্জ্যে প্রতিফলিত হতে পারে না। এই অঞ্চলটি একটি আদর্শ 'পরিষ্কার' অনুসন্ধান ক্ষেত্র তৈরি করে। গবেষকরা ক্যালিফোর্নিয়ার জুইকি ট্রানজিয়েন্ট ফ্যাসিলিটি (ZTF) থেকে প্রাপ্ত দুই লক্ষেরও বেশি চিত্র বিশ্লেষণ করেছেন, বিশেষ করে পৃথিবীর ছায়ার মধ্যে ধারণ করা ছবিগুলিতে মনোযোগ দিয়েছেন। তাদের স্বয়ংক্রিয় অনুসন্ধান ব্যবস্থা, NEOrion, হাজার হাজার সম্ভাব্য বস্তুর সন্ধান পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রহস্যময় আলোর ঝলকানি এবং দ্রুত গতিশীল বস্তু।
যদিও বেশিরভাগই উল্কাপিণ্ড, বিমান বা পরিচিত গ্রহাণু হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে, তবে একটি অস্বাভাবিক বস্তু পাওয়া গেছে যা সাধারণ গ্রহাণুর চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে চলছিল এবং বিদ্যমান ডেটাবেসের কোনও তালিকার সাথে মেলেনি। এই বস্তুটি এখনও পর্যন্ত সনাক্ত করা যায়নি, যা এর উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে এবং অ-মানব প্রযুক্তির সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। এই গবেষণাটি রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি (Royal Astronomical Society) দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে, যা এই পদ্ধতির কার্যকারিতা প্রমাণ করে।
এটি দেখায় যে বিদ্যমান টেলিস্কোপ এবং নতুন বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে ভিনগ্রহের বস্তুগুলির পদ্ধতিগত অনুসন্ধান সম্ভব। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, গবেষকরা ExoProbe প্রকল্পটি তৈরি করছেন, যা এই ধরনের অনুসন্ধানের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা টেলিস্কোপের একটি নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কটি একাধিক যুগপৎ পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে রহস্যময় বস্তুগুলির সঠিক দূরত্ব নির্ধারণ করবে। এই নতুন পদ্ধতিটি মহাকাশ পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, যা আমাদের মহাবিশ্বের অন্বেষণে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে। এটি কেবল ভিনগ্রহের জীবনের অনুসন্ধানকেই এগিয়ে নিয়ে যায় না, বরং মহাকাশের ক্রমবর্ধমান বর্জ্য এবং উপগ্রহের ভিড়েও নতুন কিছু খুঁজে বের করার একটি কার্যকর উপায়ও প্রদান করে।
উৎসসমূহ
Todo Noticias
Phys.org
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
