বিশ্ব মহাসাগরের জলরাশি এক নতুন গবেষককে স্বাগত জানাচ্ছে। সার্ফবোর্ডের আকারের একটি রোবোটিক ডুবোজাহাজ, যার নাম রেডউইং (Redwing), 'সেনটিনেল মিশন (Sentinel Mission)' প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর তারিখে পাঁচ বছরব্যাপী বিশ্ব পরিভ্রমণে যাত্রা শুরু করেছে। এটি হলো একটি সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত আন্ডারওয়াটার গ্লাইডারের ইতিহাসে প্রথম যাত্রা, যা ষোড়শ শতকে ফার্দিনান্দ ম্যাগেলানের বিশ্ব ভ্রমণের দ্বারা অনুপ্রাণিত।
এই প্রকল্পটি টেলিডাইন ওয়েব রিসার্চ (Teledyne Webb Research) কর্তৃক রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয় (আমেরিকা)-এর সহযোগিতায় এবং নোয়া (NOAA), নাসা (NASA) সহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলোর সমর্থনে তৈরি করা হয়েছে। এর উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য হলো ৭৩,০০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এই পুরো যাত্রাপথ জুড়ে মহাসাগরের অবস্থা সম্পর্কে অবিচ্ছিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা। এই তথ্য সংগ্রহ সমুদ্রবিদ্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রেডউইং হলো একটি স্লোকাম সেনটিনেল (Slocum Sentinel) গ্লাইডার, যার দৈর্ঘ্য ২.৫৭ মিটার। এটি প্রপেলার ছাড়াই কাজ করে। এটি তার প্লবতা পরিবর্তন করে চলাচল করে, যেন এটি জলের মধ্যে শ্বাস নিচ্ছে। এই নীতি যন্ত্রটিকে ন্যূনতম শক্তি ব্যয় করে হাজার হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করতে সাহায্য করে। এর রুটটি আটলান্টিক, ভারত এবং প্রশান্ত মহাসাগরকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি মানব ইতিহাসের ঐতিহাসিক সমুদ্রপথ অনুসরণ করে কেপ টাউন, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া এবং চিলির উপকূলে মধ্যবর্তী বিরতি দেবে।
এই যন্ত্রটি অত্যাধুনিক সেন্সর দ্বারা সজ্জিত, যা এমন অঞ্চলে তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, জলের রাসায়নিক গঠন এবং সমুদ্র স্রোত পরিমাপ করে যেখানে বৈজ্ঞানিক জাহাজগুলি খুব কমই পৌঁছাতে পারে। রেডউইং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে রিয়েল-টাইমে তথ্য প্রেরণ করবে, যা বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদদের জন্য তথ্যের এক অনন্য প্রবাহ নিশ্চিত করবে এবং মহাসাগরের গভীরতা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে।
রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অস্কার শুলেনবার্গ এই মিশনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “রেডউইং কেবল একটি যন্ত্র নয়। এটি সমুদ্রবিদ্যার একটি নতুন পর্যায়ের প্রতীক, যেখানে মানুষ এবং প্রযুক্তি পৃথিবীর শ্বাস-প্রশ্বাস শুনতে শিখছে।”
এই মিশনটি স্বায়ত্তশাসিত সমুদ্র গবেষণার এক নতুন যুগের সূচনা করে। এটি পরবর্তী প্রজন্মের গবেষকদের অনুপ্রাণিত করে, যারা মহাসাগরকে কোনো অতল গহ্বর হিসেবে নয়, বরং পৃথিবীর জীবন্ত হৃদয় হিসেবে দেখে। রেডউইং জ্ঞানের মশাল বহনকারী হিসেবে সেই গভীরতায় প্রবেশ করেছে, যেখানে মানবজাতি এখনও নিজেদের প্রতিচ্ছবি শুনতে শিখছে এবং সমুদ্রের রহস্য উন্মোচন করছে।