অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার সঙ্গে গভীর সমুদ্রের অক্সিজেন-শূন্যতার অতীত ঘটনার যোগসূত্র খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

সম্পাদনা করেছেন: Inna Horoshkina One

বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি নতুন প্রমাণ উন্মোচন করেছেন যা অ্যান্টার্কটিকার গভীর জলের অতীতের 'শ্বাসরুদ্ধকর' অবস্থা এবং পরবর্তীকালে তার পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোকপাত করে। এই গবেষণাটি দেখায় যে কীভাবে গভীর সমুদ্রের জল একবার অক্সিজেন স্বল্পতার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল, যা পৃথিবীর জলবায়ু ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

নেচার কমিউনিকেশনস (Nature Communications) জার্নালে প্রকাশিত (২০২৫) এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্রটি নিশ্চিত করে যে, প্রায় ৪,২৬,০০০ বছর আগেকার একটি প্রাচীন আন্তঃহিমবাহ যুগে (interglacial period) অ্যান্টার্কটিকার তলদেশের জল ব্যাপক মাত্রায় অক্সিজেন-শূন্যতার (ডিওক্সিজেনেশন) সম্মুখীন হয়েছিল। এই ঘটনাটি সমুদ্রের পরিবেশের উপর উষ্ণায়নের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।

এই আবিষ্কারটি সম্ভব হয়েছে গভীর সমুদ্রের কোর বিশ্লেষণ করে। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের আইওডিপি ইউ১৫৪০ (IODP U1540) এলাকা থেকে সংগৃহীত এই কোরগুলিতে অথিজেনিক ইউরেনিয়ামের (aU) অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ মাত্রা লক্ষ্য করা গেছে। অথিজেনিক ইউরেনিয়ামের এই উচ্চ উপস্থিতি হলো সমুদ্রের জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার একটি সরাসরি এবং শক্তিশালী রাসায়নিক প্রমাণ।

গুরুত্বপূর্ণভাবে, অক্সিজেনের এই অভাবের সময়কালগুলি তলদেশের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে মিলে যায়। সেই প্রাচীন উষ্ণ সময়ে গভীর জলের তাপমাত্রা আধুনিক মানের চেয়ে প্রায় ১°C বেশি ছিল। একই সঙ্গে, বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বর্তমান স্তরের চেয়ে ১৩ মিটার উপরে ছিল। এই সংখ্যাগুলি সেই সময়ের জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা এবং বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করে।

গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, সেই উষ্ণ সময়ে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিক বরফ চাদরের (West Antarctic Ice Sheet) পশ্চাদপসরণই ছিল গভীর সমুদ্রের অক্সিজেন স্বল্পতার মূল কারণ। এই বরফ গলে যাওয়ায় বিপুল পরিমাণ স্বাদু জলের প্রবাহ শুরু হয় এবং এর ফলে সমুদ্র স্রোতের বিন্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। এই পুনর্গঠিত স্রোত প্রবাহের কারণেই গভীর সমুদ্রের স্তরগুলিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়।

এই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে অ্যান্টার্কটিকার বরফে ঢাকা মহাদেশটি বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রতি কতটা সংবেদনশীল। বিজ্ঞানীরা জোর দিয়ে সতর্ক করছেন যে, বর্তমানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং হিমবাহ গলে যাওয়ার গতি বাড়ার কারণে ভবিষ্যতে একই ধরনের ডিওক্সিজেনেশন ঘটনা আবার ঘটতে পারে। এই ধরনের পরিবর্তনগুলি সমুদ্রের 'শ্বাস-প্রশ্বাস' এবং পৃথিবীর জলবায়ুর ছন্দকে হাজার হাজার বছর ধরে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।

গবেষণাটির লেখকগণ এই বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন: “সমুদ্রের গভীরতা সবকিছু মনে রাখে। এবং যখন বরফ সরে যায়, তখন জল কথা বলতে শুরু করে।”

উৎসসমূহ

  • Nature

  • Nature

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।