MISO BACTERIA: মাইক্রোবাইয়া যেগুলো ‘লোহা শ্বাস নেয়’—পৃথিবীকে বিষমুক্ত করতে
MISO: কীভাবে অণুজীবরা 'মরিচা শ্বাস' নিয়ে সমুদ্রকে বিষমুক্ত করে
সম্পাদনা করেছেন: Inna Horoshkina One
ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Vienna) অণুজীববিজ্ঞানী মার্ক মুসমান (Mark Musmann) এবং আলেকজান্ডার লয় (Alexander Loy)-এর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল বিশ্বব্যাপী মৌলগুলির চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী একটি পূর্বে অজানা জৈবিক প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন। এই প্রক্রিয়াটি আমাদের গ্রহের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এই নতুন পথটিকে MISO (Microbial Iron Sulfide Oxidation) বা 'মাইক্রোবিয়াল আয়রন সালফাইড অক্সিডেশন' নাম দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অণুজীবরা কঠিন লোহার খনিজগুলিকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এবং একই সাথে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইডকে নিষ্ক্রিয় করে তোলে।
গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড এবং আয়রন(III) অক্সাইডের কঠিন রূপ—যা আমরা সাধারণত 'মরিচা' বলে জানি—এর মধ্যেকার মিথস্ক্রিয়াটি কেবল একটি সরল রাসায়নিক বিক্রিয়া নয়, বরং এটি একটি সজীব জৈবিক প্রক্রিয়া। MISO অণুজীবগুলি, যার মধ্যে *Desulfovibrio alkaliphilus* অন্যতম, তাদের লোহাকে 'শ্বাস নেওয়ার' ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। এই প্রক্রিয়ায় তারা সালফাইডকে সালফেটে রূপান্তরিত করে।
এই রূপান্তর প্রক্রিয়াটি অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হয়। অ-জৈবিক পরিবেশে সালফাইড থেকে সালফেটে রূপান্তর হতে যে সময় লাগে, তার তুলনায় এই অণুজীবগুলি দশ গুণ দ্রুত হারে কাজটি করে। এই অত্যন্ত অভিযোজিত জীবগুলি সামুদ্রিক তলদেশের পলল এবং আর্দ্র মাটির মতো অ্যানেরোবিক অঞ্চলে (যেখানে অক্সিজেন নেই) বাস করে। এই স্থানগুলি সাধারণত জীবনের জন্য প্রতিকূল। কিন্তু এই অণুজীবরা প্রমাণ করে যে যেখানে অক্সিজেন অনুপস্থিত, সেখানেও জীবন লোহার মাধ্যমে তার পথ খুঁজে নেয় এবং টিকে থাকে।
MISO প্রক্রিয়াটি হাইড্রোজেন সালফাইডের জারণের (oxidation) সাথে আয়রন(III)-এর বিজারণকে (reduction) সংযুক্ত করে, যা অণুজীবদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে—ঠিক যেমন উদ্ভিদরা সালোকসংশ্লেষণের জন্য সূর্যের আলো ব্যবহার করে। এই বিপাকীয় কৌশলটি কার্যকরভাবে সালফার, লোহা এবং কার্বন চক্রকে একসূত্রে বাঁধে। এই কারণে, বিজ্ঞানীরা এই অণুজীবগুলিকে পৃথিবীর জলবায়ুগত ভারসাম্যের অদৃশ্য স্থপতি হিসেবে অভিহিত করেছেন।
গবেষকরা অনুমান করেন যে সামুদ্রিক পললে পাওয়া মোট বৈশ্বিক সালফাইডের ৭% পর্যন্ত জারিত করার জন্য MISO ব্যাকটেরিয়ার কার্যকলাপ দায়ী হতে পারে। এটি একটি বিশাল পরিমাণ যা তাদের পরিবেশগত প্রভাবের গুরুত্ব তুলে ধরে। এইভাবে, তারা একটি প্রাকৃতিক বাফার হিসাবে কাজ করে, যা মহাসাগরে অক্সিজেন-শূন্য 'মৃত অঞ্চল' (dead zones)-এর বিস্তার রোধ করে—এই অঞ্চলগুলিতে হাইড্রোজেন সালফাইড জমা হয় এবং জলজ জীবন বিলীন হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াটি মহাসাগরের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
এই আবিষ্কারের তাৎপর্য তুলে ধরে আলেকজান্ডার লয় জোর দিয়ে বলেন, “এই অনুসন্ধানটি অণুজীবদের বিপাকীয় উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং বিশ্বব্যাপী জৈব-ভূ-রাসায়নিক চক্র গঠনে তাদের অপরিহার্য ভূমিকা প্রদর্শন করে।” এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি মর্যাদাপূর্ণ *Nature* জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি গ্রহীয় স্থিতিশীলতা বোঝার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে এমনকি অদৃশ্য জীবনও ভারসাম্যের সেই সিম্ফনিতে অংশ নেয়, যাকে আমরা 'সজীব পৃথিবী' (Living Earth) বলি।
উৎসসমূহ
ScienceDaily
Bacteria that 'breathe' iron minerals while detoxifying sulfide outpace chemical reactions
Microbes that breathe rust could help save Earth's oceans
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
