পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার উপকূলবর্তী গ্যাসকোইন মেরিন পার্কে (Gascoyne Marine Park) জীববৈচিত্র্য অধ্যয়নের সময় গবেষকরা আনুষ্ঠানিকভাবে গভীর সমুদ্রের এক নতুন প্রজাতির হাঙরকে বিজ্ঞান মহলের সামনে তুলে ধরেছেন। এই প্রজাতিটির নামকরণ করা হয়েছে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান লণ্ঠন হাঙর (*Etmopterus westraliensis*)। এই আবিষ্কার আবারও প্রমাণ করে যে পৃথিবীর মহাসাগরগুলির বিশাল অংশ এখনও মানুষের কাছে অজানা এবং অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ফিশ কালেকশন অফ সিএসআইআরও (CSIRO)-এর ডঃ উইল হোয়াইট-সহ বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন যে লণ্ঠন হাঙরগুলি গভীর সমুদ্রের শিকারি প্রাণীদের মধ্যে এক বিস্ময়কর গোষ্ঠী।
এই ক্ষুদ্রাকৃতির হাঙরটি দৈর্ঘ্যে ৪১ সেন্টিমিটারের বেশি হয় না; রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় নমুনাটির দৈর্ঘ্য ছিল ৪০৭ মিমি। এটি ৬১০ মিটার পর্যন্ত গভীরতায় জীবনধারণের জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত। এর অত্যাশ্চর্য অভিযোজনগুলির মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম আলো ধরার জন্য তৈরি বড় চোখ এবং বায়োলুমিনেসেন্ট অঙ্গগুলির সারি—যাকে বলা হয় ফটোফোর—যা এর পেট ও পাশ বরাবর অবস্থিত। এই আলোক-উৎপাদনকারী বৈশিষ্ট্যই এই পুরো গণকে (lantern sharks) তাদের নাম দিয়েছে।
এই নতুন প্রজাতিটির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ২০২২ সালে ‘ইনভেস্টিগেটর’ (Investigator) নামক গবেষণা জাহাজের মাধ্যমে পরিচালিত এক অভিযানের সময় সংগৃহীত ছয়টি নমুনার ভিত্তিতে। এই ছয়টি নমুনা থেকেই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি। গভীর সমুদ্রের এই প্রাণীগুলির জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের উপর আলোকপাত করার জন্য এই ধরনের অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান লণ্ঠন হাঙরের আবিষ্কার ছিল একটি বৃহত্তর বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার অংশ। একই ২০২২ সালের অভিযানের ফলস্বরূপ আরও দুটি নতুন প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছিল, যার মধ্যে একটি হলো চীনামাটির কাঁকড়া (*Porcellanella brevidentata*)। এই কাঁকড়াটি নিঙ্গালু উপকূলের (Ningaloo coast) কাছে অপেক্ষাকৃত কম গভীরতায়—১২২ মিটার পর্যন্ত—সংগৃহীত হয়েছিল।
এই কাঁকড়াটি সামুদ্রিক পালক (sea pens) নামে পরিচিত নরম প্রবালের সাথে সহজীবী জীবনযাপন করে এবং প্ল্যাঙ্কটন খেয়ে জীবনধারণ করে। সিএসআইআরও (CSIRO) এবং পার্কস অস্ট্রেলিয়া (Parks Australia) যৌথভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে। বিজ্ঞানীরা এই গভীর সমুদ্রের বাসিন্দাদের জীবনের অফুরন্ত সম্ভাবনার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।
গবেষকরা তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। ২০২২ সালের নমুনা সংগ্রহে অংশ নেওয়া বিজ্ঞানীরা এখন কোরাল সি মেরিন পার্কে (Coral Sea Marine Park) একটি নতুন অভিযানের পরিকল্পনা করছেন। প্রতিটি নতুন আবিষ্কার সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জটিলতা এবং আন্তঃসংযুক্ততা সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে গভীর করে তোলে এবং ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। সিএসআইআরও-এর ডঃ উইল হোয়াইট বলেন, “প্রতিটি নতুন প্রজাতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়: মহাসাগর নিঃশেষিত হয়নি। এটি শ্বাস নেয়, আলো ছড়ায় এবং আমাদের আহ্বান জানায়—এর রহস্যগুলির সাক্ষী হওয়ার জন্য।”