ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার গভীরে, কাচারি জলপ্রপাতের কাছে এক অসাধারণ উদ্ভিদতাত্ত্বিক আবিষ্কারের সাক্ষী হয়েছে। সম্প্রতি, মাইসেটিয়া মায়ালানা (Mycetia malayana) নামক একটি বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ প্রথমবার ভারতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই উদ্ভিদটি পূর্বে শুধুমাত্র মালয়, বোর্নিও এবং থাইল্যান্ডের মতো অঞ্চলে পাওয়া যেত, যা এই আবিষ্কারকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের গবেষক দীক্ষিত বোরা এবং তাঁর সহকর্মীরা, কাচারি জলপ্রপাত এলাকায় একটি ফিল্ড স্টাডি চলাকালীন এই বিরল উদ্ভিদটির সন্ধান পান। তারা দুটি মাইসেটিয়া প্রজাতির সন্ধান পেয়েছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল এই মায়ালানা মাইসেটিয়া। বিস্তারিত শ্রেণিবিন্যাসগত অধ্যয়ন এবং সাহিত্য পর্যালোচনার পর, দলটি নিশ্চিত করে যে এটি ভারতের উদ্ভিদজগতে মাইসেটিয়া প্রজাতির নবম সংযোজন। এই আবিষ্কারটি ত্রিপুরার অনাবিষ্কৃত অঞ্চলের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যকে তুলে ধরে এবং চলমান উদ্ভিদতাত্ত্বিক গবেষণার গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি সম্ভব হয়েছে ২৬শে মে, ২০২৫ তারিখে, যখন দলটি কাচারি জলপ্রপাতের মতো দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। দীক্ষিত বোরা জানান যে, “গত পাঁচ বছরে আমরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছি এবং নতুন নতুন উদ্ভিদ প্রজাতির সন্ধান পেয়েছি। কাচারি জলপ্রপাতে যাওয়া আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল, কিন্তু খারাপ সংযোগ ব্যবস্থার কারণে আমরা আগে সেখানে পৌঁছাতে পারিনি।” তিনি আরও বলেন, “জলপ্রপাতের একপাশে মাইসেটিয়া লংগিফ্লোরা এবং অন্যপাশে এই অপরিচিত প্রজাতিটি খুঁজে পাই। পরে বিস্তারিত আলোচনার পর আমরা নিশ্চিত হই যে এটি মায়ালানা মাইসেটিয়া।” এই আবিষ্কারটি কেবল ত্রিপুরার জীববৈচিত্র্যের সম্ভাবনার কথাই বলে না, বরং ভারতের উদ্ভিদ গবেষণার ক্ষেত্রেও একটি মাইলফলক। মায়ালানা মাইসেটিয়া সম্প্রতি বাংলাদেশেও রিপোর্ট করা হয়েছে, যা এই প্রজাতির বিস্তৃতি সম্পর্কে আরও তথ্য সরবরাহ করে। এই ধরনের গবেষণাগুলি আমাদের গ্রহের প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে প্রসারিত করে এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য এই অমূল্য সম্পদগুলি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। এই আবিষ্কারটি ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলিতে আরও অনেক অজানা উদ্ভিদ এবং প্রাণীর অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে, যা আরও গভীর অনুসন্ধানের জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।