ব্রাজিলের রিও গ্র্যান্ডে দো নর্তে রাজ্যের পারনামারিম শহরে অবস্থিত কাজুয়েইরো দে পিরাঙ্গি, যা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস দ্বারা বিশ্বের বৃহত্তম কাজু গাছ হিসাবে স্বীকৃত, বর্তমানে একটি বিলম্বিত ছাঁটাই কর্মসূচির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রায় ৮,৫০০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই বিশাল গাছটি প্রায় একটি ফুটবল মাঠের সমান। এর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি স্থানীয় রাস্তা, বাড়িঘর এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে, যার ফলে গাছটির নিয়মিত ছাঁটাইয়ের জন্য একটি বিচারিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে, এই ছাঁটাই প্রক্রিয়াটি ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর মূল কারণ হলো গাছটির ফুল ফোটার সময়, যা সাধারণত আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে ঘটে। এই সময়কালে ছাঁটাই করলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ফল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। কাজু গাছের ছাঁটাইয়ের সঠিক সময় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি গাছের স্বাস্থ্য, ফলন এবং সামগ্রিক বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। সাধারণত, বসন্তকালে নতুন বৃদ্ধির আগে ছাঁটাই করা সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বলে মনে করা হয়, যা গাছের নতুন জীবনচক্র শুরু করতে সাহায্য করে।
কিংবদন্তি অনুসারে, গাছটি ১৮৮৮ সালে একজন জেলে দ্বারা রোপণ করা হয়েছিল। গাছটির ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণের বিষয়ে আলোচনা চলছে, যেখানে জনশুনানি এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কাজুয়েইরো দে পিরাঙ্গি এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ব্রাজিল এবং বিদেশের বহু পর্যটককে আকর্ষণ করে। এই গাছটি প্রায় ১২০ বছরের পুরানো এবং এর বিশাল আকার এর অস্বাভাবিক জেনেটিক মিউটেশনের কারণে হয়েছে, যার ফলে এর পাঁচটি শাখার মধ্যে চারটি মাটিতে স্পর্শ করলে নতুন শিকড় তৈরি করে এবং গাছের বিস্তার বাড়ায়। পর্যটকদের জন্য, এই গাছটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা একটি একক গাছের চেয়ে একটি ছোট বনের মতো মনে হয়। এর বিশাল ক্যানোপি প্রায় ৮,৫০০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যা প্রায় ৭০টি সাধারণ কাজু গাছের সমান। পর্যটকদের ভিড় এড়াতে এবং মাটির কম্প্যাকশন কমাতে গাছের নিচে কাঠের ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই গাছটি প্রতি বছর প্রায় ৬০,০০০ এর বেশি কাজু ফল উৎপাদন করে এবং এটি রাজ্যের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।
পর্যটন কর্মী এবং জীববিজ্ঞানী উভয়ের মধ্যেই ছাঁটাই প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তাদের মতে, এটি কেবল ডালপালা ছাঁটাই নয়, বরং এমন একটি পদ্ধতি যা অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যদি গাছটি এই প্রক্রিয়াটি সহ্য করতে না পারে, তবে এটি মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে। এই ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক বিস্ময়টির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য, এর বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত প্রভাবের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য। ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তটি সাবধানে বিবেচনা করা হচ্ছে যাতে গাছটির দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা এবং এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের উপর এর ইতিবাচক প্রভাব বজায় থাকে।