পেরুর পাসকো অঞ্চলের অক্সাপাম্পা-আশানিনকা-ইয়ানেশা বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের পাহাড়ি জঙ্গলে গবেষকরা একটি নতুন অর্কিড প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন, যার নামকরণ করা হয়েছে *টেলিপোগন ইয়ানেশা*। এই ক্ষুদ্র অর্কিডটি প্রায় ৩০০ থেকে ৪৫০০ মিটার উচ্চতায় *মিকোনিয়া ক্যালোফাইলা* গাছের উঁচু ডালে জন্মাতে দেখা গেছে। এই নতুন প্রজাতির বৈজ্ঞানিক বর্ণনাটি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে *ফাইটো ট্যাক্সা* জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, যার রচয়িতা লুইস ভ্যালেনজুয়েলা-গামারা এবং উইলিয়াম নৌর্যা-হুয়ারি। পেরুতে বর্তমানে এগারোটি পরিচিত *টেলিপোগন* প্রজাতির তালিকায় যুক্ত হয়ে মোট বারোটি প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে, যা আন্দিজ পর্বতমালার গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের ইঙ্গিত দেয়।
এই নতুন প্রজাতিটির নামকরণ করা হয়েছে ইয়ানেশা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সম্মানে, যারা এই অঞ্চলে বাস করে এবং এখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখে। এই আবিষ্কারটি সুরক্ষিত প্রাকৃতিক অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এবং সংরক্ষণের প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরে। অক্সাপাম্পা-আশানিনকা-ইয়ানেশা বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, ইউনেস্কো কর্তৃক ২০১০ সালে স্বীকৃত, পেরুর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত অঞ্চল, যা প্রায় ১.৮ মিলিয়ন হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটি পূর্ব আন্দিজের একটি অক্ষত বাস্তুতন্ত্রের অংশ এবং আমাজন অববাহিকা পর্যন্ত প্রসারিত। এই রিজার্ভটি প্রায় ৫,০০০ উদ্ভিদ প্রজাতি, যার মধ্যে ১,৪০০ বৃক্ষ প্রজাতি এবং ৬০০ অর্কিড প্রজাতি রয়েছে। এই অসাধারণ উদ্ভিদ বৈচিত্র্য এখানকার সমৃদ্ধ প্রাণীজগতেরও আশ্রয়স্থল। এখানে জাগুয়ার, পুমা, এবং স্পেকট্যাকলড বিয়ারের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং আন্দিজ কক-অফ-দ্য-রক ও হার্পি ঈগলের মতো পাখি দেখা যায়। এই অঞ্চলে *কটেনোফ্রিন বারবাটুলা* নামক একটি বিরল ব্যাঙের প্রজাতিও পাওয়া যায়, যা শুধুমাত্র এখানেই সীমাবদ্ধ।
*টেলিপোগন* গণের অর্কিডগুলি তাদের আকর্ষণীয় এবং জটিল ফুলের জন্য পরিচিত, যা প্রায়শই ছোট মানুষের মুখের মতো দেখতে হয় এবং এতে বেগুনি, লাল এবং হলুদ রঙের মিশ্রণ দেখা যায়। এই এপিফাইটিক অর্কিডগুলি আর্দ্র, কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘের জঙ্গলে গাছের ডালে জন্মাতে পছন্দ করে, যেখানে তাদের শিকড় বাতাস থেকে আর্দ্রতা এবং পুষ্টি শোষণ করে। এরা চ্যালেঞ্জিং এবং পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। *ফাইটো ট্যাক্সা* জার্নালটি একটি পিয়ার-রিভিউড বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা যা পদ্ধতিগত উদ্ভিদবিদ্যার যেকোনো দিকের দ্রুত প্রকাশের জন্য পরিচিত। এটি ২০১২ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে এবং এটি ম্যাগনোলিয়া প্রেস দ্বারা প্রকাশিত হয়। জার্নালটি স্কোপাস এবং ওয়েব অফ সায়েন্স সহ বিভিন্ন সূচকে অন্তর্ভুক্ত। এর ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর প্রায় ১.০।
ইয়ানেশা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জ্ঞান এবং তাদের সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে এই নতুন প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে। এটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আদিবাসী জ্ঞান ও ঐতিহ্যের গুরুত্বকে তুলে ধরে। পেরুর আদিবাসী জনগোষ্ঠী হাজার হাজার বছর ধরে তাদের পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপন করছে এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আবিষ্কারটি পেরুর জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধি এবং এই মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাকে আরও একবার প্রমাণ করে। এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহযোগিতার মাধ্যমে প্রকৃতির নতুন রহস্য উন্মোচনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।