ক্যামোমাইল, যার বৈজ্ঞানিক নাম *Matricaria recutita*, বর্তমানে কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদরোগের স্বাস্থ্য রক্ষায় এর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে। এই প্রাচীন ভেষজটি তার প্রদাহ-বিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত, যা অ্যাপিজেনিন এবং কোয়ার্সেটিনের মতো যৌগগুলির উপস্থিতির কারণে সম্ভব হয়েছে। এই যৌগগুলি হৃদযন্ত্রকে বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, ক্যামোমাইল এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং এর হালকা ঘুমের প্রভাব মানসিক চাপ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এই ভেষজটির উপকারিতা পেতে প্রতিদিন ক্যামোমাইল চা পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি প্রস্তুত করার একটি সহজ পদ্ধতি হলো এক চা চামচ শুকনো ক্যামোমাইল ফুল গরম জলে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা। দিনে একবার বা দুবার, বিশেষ করে খাবারের পর এই চা পান করলে তা সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। যদিও ক্যামোমাইল সাধারণত নিরাপদ, তবে অ্যাস্টারাসি (Asteraceae) পরিবারের প্রতি অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের এটি ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। এছাড়াও, রক্ত পাতলা করার ওষুধের মতো নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের সাথে এর সম্ভাব্য মিথস্ক্রিয়া এবং গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করানোর সময় এর ব্যবহার সম্পর্কে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি ক্যামোমাইলের হৃদরোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে আরও জোরালোভাবে সমর্থন করছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত ক্যামোমাইল চা পান করেন তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এই ভেষজটির উপাদানগুলি রক্তনালীগুলিকে শিথিল করতে এবং রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে সাহায্য করে, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যামোমাইলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। এটি কেবল একটি পানীয় নয়, বরং সুস্থ জীবনযাপনের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা শরীর ও মনকে শান্ত রাখতে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ক্যামোমাইলের এই বহুমুখী উপকারিতা এটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছে।