একটি সাম্প্রতিক গবেষণা, যা *নেচার জিওসায়েন্স* জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, বরফ যুগের সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন এবং বরফ গলে যাওয়ার সাথে প্রাচীন ভূগর্ভস্থ জলের সংযোগ উন্মোচন করেছে। এই গবেষণাটি নরওয়ের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলের সমুদ্রতলদেশ থেকে সংগৃহীত তরল নমুনার বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি। প্রায় ১১,৭০০ বছরেরও বেশি আগেকার এই প্রাচীন ভূগর্ভস্থ জল, যা বর্তমানে হিমবাহের নিচে চাপা পড়ে আছে, তা একসময় পৃথিবীর পৃষ্ঠের সাথে বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে ছিল। এই জল বরফ যুগের সময়কালে, বিশেষ করে ফিনোস্ক্যান্ডিয়ান বরফ শীট যখন এই অঞ্চলকে আবৃত করেছিল, তখন ভূগর্ভে প্রবেশ করেছিল। সেই সময়ে, প্রায় এক কিলোমিটার উঁচু হিমবাহের গলিত জল ভূগর্ভস্থ স্থানগুলিতে প্রবেশ করে এই মিষ্টি জলের ভাণ্ডার তৈরি করেছিল। গবেষকরা সমুদ্রতলদেশে ৭৬০ মিটার গভীরতায় এই মিষ্টি ভূগর্ভস্থ জলের সন্ধান পান। কার্বন-১৪ ডেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে এই জলের বয়স নির্ধারণ করা হয়, যা এর বায়ুমণ্ডলীয় সংস্পর্শের শেষ সময় নির্দেশ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে ফিনোস্ক্যান্ডিয়ান বরফ শীটের পশ্চাদপসরণের পর এই ভূগর্ভস্থ জলের রাসায়নিক গঠনে পরিবর্তন আসে। বরফ শীট গলে যাওয়ার পর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং ধীরে ধীরে এই বিশুদ্ধ জল সমুদ্রের নোনা জল দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। এই গবেষণাটি প্রথমবারের মতো একটি বিস্তারিত সময়রেখা প্রদান করে যা দেখায় কিভাবে প্রাচীন ভূগর্ভস্থ জল সমুদ্রে প্রবাহিত হয়েছে এবং বরফ যুগের পরিবর্তনের দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়েছে, এমনকি সমুদ্র থেকে অনেক দূরেও। এটি নিশ্চিত করে যে কখন ভূগর্ভস্থ জলের গঠন পরিবর্তিত হয়েছিল এবং বরফ গলা জলের সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর এটি কতটা দ্রুত সমুদ্রের জলের সাথে মিশে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছিল। এই আবিষ্কারগুলি হিমবাহের স্থিতিশীলতা, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং সমুদ্রের কার্বন শোষণ ক্ষমতা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান উষ্ণ জলবায়ু এবং হিমবাহ গলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই গবেষণা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। এটি নিশ্চিত করে যে প্রাচীন ভূগর্ভস্থ জল স্থির নয়, বরং এটি বরফ যুগের চক্র দ্বারা গতিশীলভাবে প্রভাবিত হয়। গবেষণাটি, যার শিরোনাম "Deglaciation drove seawater infiltration and slowed submarine groundwater discharge", *নেচার জিওসায়েন্স* জার্নালে আগস্ট ২০২৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে। এটি আরও ইঙ্গিত দেয় যে এই ধরনের ভূগর্ভস্থ জলের প্রবাহ হিমবাহের স্থিতিশীলতাকেও প্রভাবিত করতে পারে, যা বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আরও গবেষণার দাবি রাখে।