দক্ষিণ চীনের গুইঝো প্রদেশে বিশ্বের সর্বোচ্চ সেতু হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ব্রিজ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে চালু হয়েছে। এটি কেবল একটি প্রকৌশলগত বিস্ময়ই নয়, বরং এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। সেতুটি নির্মাণের ফলে দুই ঘণ্টার দীর্ঘ ভ্রমণ সময় মাত্র দুই মিনিটে নেমে এসেছে। বেইপান নদীর উপর নির্মিত এই সেতুটি প্রায় ৬২৫ মিটার (২,০৫০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত, যা একে বিশ্বের সর্বোচ্চ সেতুর মর্যাদা দিয়েছে। এর মূল স্প্যান ১,৪২০ মিটার (৪,৬৫৯ ফুট) দীর্ঘ, যা একে পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘতম সেতু হিসেবেও পরিচিতি দিয়েছে।
গুইঝো প্রদেশ, যা তার দুর্গম পার্বত্য এবং কার্স্ট ভূখণ্ডের জন্য পরিচিত, দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রদেশটি 'সেতু প্রদেশ' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে, যেখানে ৩২,০০০ এরও বেশি সেতু নির্মিত হয়েছে বা নির্মাণাধীন রয়েছে এবং বিশ্বের ১০০টি সর্বোচ্চ সেতুর প্রায় অর্ধেকই এখানে অবস্থিত। হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ব্রিজ পূর্বের রেকর্ডধারী বেইপানজিয়াং ব্রিজকেও ছাড়িয়ে গেছে, যা পূর্বে বিশ্বের সর্বোচ্চ সেতুর খেতাব ধারণ করত। এই সেতুটি ২০২২ সালে নির্মাণ শুরু হয়েছিল এবং প্রায় সাড়ে তিন বছরে এর নির্মাণ কাজ চলেছে।
কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই সেতু শুধুমাত্র যাতায়াতের সুবিধা এবং গতিই বাড়াবে না, বরং গুইঝো অঞ্চলের পর্যটন ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেতুর সর্বোচ্চ বিন্দুতে একটি ক্যাফে রয়েছে, যা নদী থেকে প্রায় ৭৯২ মিটার (২,৫৯৮ ফুট) উপরে অবস্থিত এবং এখান থেকে ক্যানিয়নের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এখানে বাঞ্জি জাম্পিং এবং একটি কাঁচের মেঝেযুক্ত হাঁটার পথও রয়েছে যা ৫৭৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এই সেতুটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে চাকরি, বাজার, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো সুযোগগুলিতে উন্নত প্রবেশাধিকার প্রদান করে সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করছে।
হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ব্রিজের নির্মাণ কেবল একটি প্রকৌশলগত সাফল্যই নয়, এটি চীনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং উন্নত ভবিষ্যতের প্রতীক। এতে উন্নত বায়ু-প্রতিরোধী নকশা, উচ্চ-উচ্চতার নির্মাণ কৌশল যা ২১টি পেটেন্ট অর্জন করেছে।