মিশরের সিনাই উপদ্বীপে আবিষ্কৃত প্রোটো-সিনাইটিক শিলালিপিগুলি সম্প্রতি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গবেষকদের মতে, প্রায় ৩,৮০০ বছর পুরানো এই শিলালিপিগুলিতে মোশির প্রাচীনতম অ-বাইবেলীয় উল্লেখ থাকতে পারে। মধ্য ব্রোঞ্জ যুগের (আনুমানিক ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এই লিপিগুলি সেমিটিক শ্রমিকদের দ্বারা খোদাই করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রোটো-সিনাইটিক লিপি, যা প্রায় ১৯শ থেকে ১৬শ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে ব্যবহৃত হত, তাকে আধুনিক বর্ণমালার আদি রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্স থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং এটিই প্রথম পরিচিত বর্ণমালা-ভিত্তিক লিখন পদ্ধতি যা পরবর্তীতে ফিনিশীয়, গ্রীক এবং ল্যাটিন বর্ণমালার ভিত্তি স্থাপন করে।
স্বাধীন গবেষক মাইকেল এস. বার-রন দাবি করেছেন যে, সেরাবিত এল-খাদিমের শিলালিপিগুলিতে 'জোট এম'মোশে' ("This is from Moses") এবং 'নে'উম এম'শে' ("A saying of Moses") এর মতো শব্দগুচ্ছ পাওয়া গেছে। আট বছর ধরে উচ্চ-মানের ছবি এবং থ্রিডি স্ক্যান বিশ্লেষণ করে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তার মতে, এই লিপিগুলির স্বতন্ত্র শৈলী, ভাষাগত বৈশিষ্ট্য এবং ব্যক্তিগত সুর একজন সুশিক্ষিত লেখকের ইঙ্গিত দেয়, যিনি মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্স সম্পর্কেও অবগত ছিলেন। এটি বাইবেলের বর্ণনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে মোশিকে ফারাওয়ের রাজদরবারে বড় হওয়া এক শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে, বার-রনের এই দাবি পণ্ডিত মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশরবিদ ডঃ থমাস স্নাইডার এই ব্যাখ্যাকে "সম্পূর্ণ অপ্রমাণিত এবং বিভ্রান্তিকর" বলে অভিহিত করেছেন এবং এই ধরনের অক্ষর শনাক্তকরণকে "নির্বিচার" বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি মনে করেন, প্রোটো-সিনাইটিক লিপির পাঠোদ্ধার অত্যন্ত কঠিন এবং এই ধরনের দাবি প্রাচীন ইতিহাসকে বিকৃত করতে পারে।
এই বিতর্ক সত্ত্বেও, সেরাবিত এল-খাদিমের শিলালিপিগুলি প্রাচীন মিশরে কর্মরত সেমিটিক শ্রমিকদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনের এক ঝলক দেখায়। কিছু শিলালিপিতে মিশরীয় দেবী হাথোর বা বা'লাতের প্রতি উৎসর্গীকৃত লেখা পাওয়া গেছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে এই নামগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে মুছে ফেলা হয়েছে এবং হিব্রু দেবতা 'এল'-এর প্রতি প্রার্থনা করা হয়েছে। এই ধর্মীয় সংঘাতের চিহ্নগুলি শ্রমিকদের মধ্যেকার বিশ্বাসগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় এবং এটি বাইবেলের যাত্রাপুস্তক-এর কিছু ঘটনার সাথেও তুলনীয় হতে পারে, যেখানে মূর্তিপূজা ত্যাগ এবং ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের বিষয়গুলি উঠে এসেছে।
মোশির নামের উল্লেখ নিশ্চিত হোক বা না হোক, এই প্রাচীন শিলালিপিগুলি মানব সভ্যতার লিখন পদ্ধতির বিবর্তন এবং প্রাচীনকালে মানুষের জ্ঞান অন্বেষণের এক মূল্যবান দলিল হিসেবে রয়ে গেছে। এই আবিষ্কারগুলি আমাদের অতীতের গভীরে প্রবেশ করতে এবং আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উৎস সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।