একসময় বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা আমাজনীয় পিরাকুরু (Arapaima gigas) মাছটি এখন টেকসই ব্যবস্থাপনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মিঠা পানির মাছ হিসেবে পরিচিত এই পিরাকুরু, যা তার বিশাল আকার এবং আমাজনীয় জীববৈচিত্র্যের প্রতীক। অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে কয়েক দশক ধরে এর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল, কিন্তু বর্তমানে কার্যকর ব্যবস্থাপনা উদ্যোগের ফলে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়গুলোর জন্য আয়ের নতুন পথ খুলে দিয়েছে। পর্যবেক্ষণাধীন এলাকায় পিরাকুরুর সংখ্যা অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৬২০% বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থাৎ বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার ছিল ১৯%। ২০২২ সালে, এই মাছের গড় আকার ছিল ১.৮০ মিটার, যা ১৯৯৮ সালের ১.২৭ মিটার থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
এই টেকসই ব্যবস্থাপনার সাফল্য ২০২২ সালে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়গুলোর জন্য ৪.৩ মিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান রিয়াল (R$) এর বেশি রাজস্ব এনে দিয়েছে। ২০২৩ সালের মৎস্য আহরণ মৌসুমে এই আয় প্রায় ১৫% বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পিরাকুরুর চামড়া এখন ফ্যাশন শিল্পে বিলাসবহুল ব্যাগ এবং অনুষঙ্গ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার মূল্য হাজার হাজার রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে। Osklen এবং Piper & Skye-এর মতো ব্র্যান্ডগুলো এই চামড়ার স্থায়িত্ব এবং পরিবেশ-বান্ধব বৈশিষ্ট্য তুলে ধরছে। তবে, এই মূল্যবান চামড়ার বাণিজ্যের একটি বড় অংশ সরাসরি জেলেদের হাতে পৌঁছায় না, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। বিলাসবহুল পণ্যের উচ্চ মূল্যের তুলনায় জেলেরা প্রতি কিলোগ্রাম মাছের জন্য গড়ে মাত্র R$ ৬.৬৮ পান, যা স্থানীয় বাজারের R$ ৪.৫০/কেজি দরের চেয়ে সামান্য বেশি। এই বৈষম্য দূরীকরণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এই টেকসই ব্যবস্থাপনার সাফল্যকে আরও জোরদার করতে এবং আমাজনীয় পরিবেশগত বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষায়, ব্রাজিলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড রিনিউয়েবল ন্যাচারাল রিসোর্সেস (Ibama) ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে 'অ্যারাপাইমা প্রোগ্রাম' চালু করেছে। পাশাপাশি, ২০২৫ সালের এপ্রিলে, অ্যামাজন সাসটেইনেবল ফাউন্ডেশন (FAS) মামিরাউয়া ইনস্টিটিউটের সাথে অংশীদারিত্বে মামিরাউয়া সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিজার্ভে পিরাকুরুর টেকসই ব্যবস্থাপনা জোরদার করার জন্য একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে, যা ৮১ জন ব্যবস্থাপককে উপকৃত করেছে। এই উদ্যোগগুলো পিরাকুরুর সংখ্যা বৃদ্ধি, সম্প্রদায়ের আয় বাড়ানো এবং প্রজাতির দীর্ঘমেয়াদী অস্তিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রচেষ্টাগুলো কেবল পিরাকুরুর জনসংখ্যা পুনরুদ্ধারেই সহায়ক হয়নি, বরং এটি আমাজনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা, সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করলে প্রকৃতি ও মানব সমাজ উভয়ই উপকৃত হতে পারে। এই মডেলটি অন্যান্য অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।