অ্যান্টার্কটিকার লিটল ডোম সি নামক প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি যুগান্তকারী বরফ খনন অভিযানের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ১.২ মিলিয়ন বছরেরও বেশি পুরানো বরফের নমুনা উদ্ধার করেছেন। ‘বিয়ন্ড এপিকা’ (Beyond EPICA) প্রকল্পের আন্তর্জাতিক গবেষক দল প্রায় ২.৮ কিলোমিটার গভীর থেকে এই বরফ কোর সংগ্রহ করেছে, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং জলবায়ুর বিবর্তন সম্পর্কে অমূল্য তথ্য ধারণ করে আছে।
এই প্রকল্পের সমন্বয়কারী ইতালির ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের পোলার সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক কার্লো বারবান্টে বলেন, "এই বরফ কোরের মাধ্যমে আমরা গ্রিনহাউস গ্যাস, রাসায়নিক পদার্থ এবং বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণার পরিবর্তনে কী ঘটেছে তা বুঝতে পারব।" পূর্বে ৮ লক্ষ বছরের পুরানো বরফ কোর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শিল্প বিপ্লবের সময়ের তুলনায় গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা কখনোই বেশি ছিল না। কিন্তু বর্তমান কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা সেই সময়ের সর্বোচ্চ মাত্রার চেয়ে প্রায় ৫০% বেশি।
গবেষকরা বরফের স্তরগুলি ধীরে ধীরে গলিয়ে প্রতিটি স্তরের রাসায়নিক গঠন পরিমাপ করার জন্য একটি উন্নত কৌশল ব্যবহার করবেন। এর মাধ্যমে তারা একটি অভূতপূর্ব জলবায়ু কালানুক্রম পুনর্গঠন করতে পারবেন, যা প্রায় দুই মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর জলবায়ু চক্রের ৪১,০০০ বছরের পর্যায় থেকে ১০০,০০০ বছরের পর্যায়ে পরিবর্তিত হওয়ার কারণ বুঝতে সহায়ক হবে। এই পরিবর্তনটি ‘মিড-প্লাইস্টোসিন ট্রানজিশন’ (Mid-Pleistocene Transition) নামে পরিচিত, যা জলবায়ু বিজ্ঞানের অন্যতম রহস্য।
এই বরফ কোর কেবল অতীতের জলবায়ু সম্পর্কেই তথ্য দেবে না, বরং বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের মডেলগুলির সাথে তুলনা করার জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বরফ গলার ফলে উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটতে পারে। প্রায় এক মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা আজকের মতোই ছিল, কিন্তু তখন জলবায়ুর আচরণ ভিন্ন ছিল। এই বরফ কোর সেই ভিন্নতার কারণ উন্মোচনে সাহায্য করবে। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে (BAS) এবং ১০টি দেশের মোট ১১টি প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা এই বরফ কোর বিশ্লেষণ করবেন। এই গবেষণা পৃথিবীর চক্রগুলি অধ্যয়ন করার এবং ভবিষ্যতের ঘটনাগুলি পূর্বাভাস দেওয়ার একটি সুযোগ করে দেবে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও কার্যকর ব্যবস্থা এবং দুর্যোগ মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হবে। এই বরফ কোর মানব সভ্যতার পূর্বে পৃথিবীর অবস্থা সম্পর্কে সরাসরি তথ্য প্রদান করে, যা ভূতাত্ত্বিকদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।