দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পয়েন্ট নিমো পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী স্থান হিসেবে পরিচিত, যা 'পোল অফ ইনঅ্যাক্সেসিবিলিটি' নামেও পরিচিত। এর ভৌগলিক অবস্থান প্রায় ৪৮°৫২′৬″ দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং ১২৩°২৩′৬″ পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ। এই স্থানটি এতটাই বিচ্ছিন্ন যে এর নিকটতম স্থলভাগগুলি হল পিটকেয়ার্ন দ্বীপপুঞ্জের ডাসি দ্বীপ, ইস্টার দ্বীপের কাছে মোটু নুই এবং অ্যান্টার্কটিকার মাহের দ্বীপ, যেগুলি প্রায় ২,৭০০ কিলোমিটার (১,৬৭৭ মাইল) দূরে অবস্থিত। ১৯৯২ সালে ক্রোয়েশিয়ান প্রকৌশলী-গবেষক হ্রভোজ লুকাটেলা কম্পিউটার মডেলিং ব্যবহার করে এই স্থানটি চিহ্নিত করেন।
আশ্চর্যজনকভাবে, পয়েন্ট নিমোর সবচেয়ে কাছের মানুষ হলেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীরা, যারা পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) উপরে অবস্থান করেন। 'পয়েন্ট নিমো' নামটি জুল ভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস 'টুয়েন্টি থাউজেন্ড লীগস আন্ডার দ্য সি' এবং 'দ্য মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ড'-এর কাল্পনিক চরিত্র ক্যাপ্টেন নিমোর সম্মানে রাখা হয়েছে, যিনি তার বিচ্ছিন্ন জীবন এবং 'নটিলাস' সাবমেরিনে একাকীত্বের জন্য পরিচিত।
পয়েন্ট নিমো কেবল ভূগোলবিদ এবং সমুদ্রবিজ্ঞানীদেরই নয়, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ১৯৮২ সালে, একটি গ্রহাণু (১৬৪০) নিমো নামকরণ করা হয় ক্যাপ্টেন নিমোর স্মরণে, যা ১৯৫১ সালের ৩১শে আগস্ট বেলজিয়ান জ্যোতির্বিদ সিলভাইন আরেন্ড ইউকেল অবজারভেটরি থেকে আবিষ্কার করেছিলেন। অধিকন্তু, ২০১৮ সালের ১১ই এপ্রিল, প্লুটোর চাঁদ শ্যারনের নিমো ক্রেটারটিও এই চরিত্রের নামে নামকরণ করা হয়।
এই বিচ্ছিন্ন স্থানটি কেবল দূরত্বের প্রতীকই নয়, এটি মহাকাশ শিল্পেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মহাকাশ সংস্থাগুলি তাদের মহাকাশযানের পুনরায় প্রবেশের (re-entry) গতিপথ গণনা করার সময় পয়েন্ট নিমোকে ব্যবহার করে। এটি একটি 'মহাকাশযান কবরস্থান' হিসাবে পরিচিত, যেখানে অকেজো মহাকাশযানগুলি তাদের শেষ পরিণতি পায়। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ার মির মহাকাশ স্টেশনটি যখন অকেজো ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন এর ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে কোনো ক্ষতি না করার জন্য এই স্থানেই পতিত হয়েছিল। এই কারণে, পয়েন্ট নিমোকে মহাকাশ শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন সহ বিভিন্ন মহাকাশযান তাদের শেষ যাত্রা সম্পন্ন করবে। এইভাবে, পয়েন্ট নিমো বিচ্ছিন্নতা এবং একাকীত্বের প্রতীক হিসেবে কাজ করে এবং পার্থিব ও মহাজাগতিক উভয় স্থানের অধ্যয়নকে অনুপ্রাণিত করে।