মানবজাতি মহাকাশ অনুসন্ধানের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। সেপ্টেম্বর ২০২৫ নাগাদ, নাসা (NASA) তাদের এক্সোপ্ল্যানেট সায়েন্স ইনস্টিটিউট (NExScI) মারফত আমাদের সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত ৬,০০০-এরও বেশি গ্রহের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে। এই মাইলফলকটি গত তিন দশকে এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারের অভাবনীয় অগ্রগতিরই সাক্ষ্য বহন করে, যেখানে আরও ৮,০০০-এর বেশি সম্ভাব্য গ্রহ নিশ্চিতকরণের অপেক্ষায় রয়েছে।
এই যুগান্তকারী সাফল্য সম্ভব হয়েছে নাসার মহাকাশ টেলিস্কোপগুলির কয়েক দশকের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে। ট্রান্সটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট (TESS) এবং কেপলার মহাকাশ টেলিস্কোপের মতো মিশনগুলি এই আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করেছে। ১৯৯৫ সালে প্রথম এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারের পর থেকে, টেলিস্কোপ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি এবং সনাক্তকরণ পদ্ধতির আধুনিকীকরণ এই আবিষ্কারের গতিকে ত্বরান্বিত করেছে। ২০১৮ সালে উৎক্ষিপ্ত TESS, TOI-512 b এবং TOI-2015 c-এর মতো অসংখ্য এক্সোপ্ল্যানেট সনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এই আবিষ্কারগুলি আমাদের সৌরজগতের বাইরের গ্রহ ব্যবস্থা এবং বাসযোগ্য পরিবেশের সম্ভাবনার উপর অমূল্য অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। K2-18 b-এর মতো গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প, মিথেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের উপস্থিতি জীবনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। এই ধরনের বায়ুমণ্ডলীয় বিশ্লেষণ, যা 'বায়োসিগনেচার' (biosignatures) নামে পরিচিত, তা জীবনের অস্তিত্বের চিহ্ন খুঁজতে অত্যন্ত সহায়ক।
নাসার এক্সোপ্ল্যানেট এক্সপ্লোরেশন প্রোগ্রাম (ExEP) পৃথিবীর মতো পাথুরে গ্রহ খুঁজে বের করতে এবং তাদের বায়ুমণ্ডলে জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন বিশ্লেষণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ (Nancy Grace Roman Space Telescope) এবং হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি (Habitable Worlds Observatory)-এর মতো ভবিষ্যৎ মিশনগুলি এই গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। রোমান টেলিস্কোপের করোনোগ্রাফ (Coronagraph) প্রযুক্তি নক্ষত্রের আলো আটকে সরাসরি গ্রহগুলির ছবি তুলতে সক্ষম হবে, যা আমাদের সৌরজগতের অনুরূপ গ্রহগুলির সরাসরি চিত্রগ্রহণের পথ খুলে দেবে।
এক্সোপ্ল্যানেটগুলির এই নিরন্তর অন্বেষণ কেবল আমাদের মহাজাগতিক বোঝাপড়াকেই গভীরতর করছে না, বরং মহাবিশ্বে আমাদের স্থান সম্পর্কে গভীরতম প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার কাছাকাছিও নিয়ে আসছে। এই ৬,০০০-এরও বেশি নিশ্চিত এক্সোপ্ল্যানেট প্রমাণ করে যে, আমরা মহাবিশ্বে একা নই, এবং আরও অনেক বিস্ময়কর আবিষ্কার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।