বিজ্ঞানীরা একটি যুগান্তকারী পরীক্ষার মাধ্যমে সোনাকে তার গলনাঙ্কের প্রায় ১৪ গুণ বেশি, অর্থাৎ প্রায় ১৯,০০০ কেলভিন (৩৩,৭০০°F) তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করতে সক্ষম হয়েছেন, অথচ এটি তরলে পরিণত হয়নি। নেচার (Nature) জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি আশির দশক থেকে চলে আসা একটি প্রচলিত তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে। স্লাক ন্যাশনাল অ্যাক্সিলারেটর ল্যাবরেটরির (SLAC National Accelerator Laboratory) বিজ্ঞানী বব নাগলারের (Bob Nagler) নেতৃত্বে গবেষণা দলটি অতি-দ্রুত এক্স-রে লেজার পালস (ultrafast X-ray laser pulses) ব্যবহার করে সোনার একটি পাতলা স্তরকে উত্তপ্ত করে। যখন বিকিরণ স্ফটিকাকার সোনার স্তর ভেদ করে, তখন পরমাণুগুলো তাদের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত একটি কম্পাঙ্কে স্পন্দিত হতে শুরু করে। এই অভূতপূর্ব দ্রুততার সাথে উত্তপ্ত করার প্রক্রিয়া সোনার স্ফটিক কাঠামোকে ভেঙে পড়তে দেয়নি, ফলে এটি কঠিন অবস্থায় বজায় ছিল। এই আবিষ্কারটি চরম তাপমাত্রা পরিমাপের একটি নতুন উপায় প্রদান করে এবং গ্রহের কেন্দ্র ও নাক্ষত্রিক পরিবেশের মতো অস্বাভাবিক পদার্থের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
এই পরীক্ষার মূল চাবিকাঠি ছিল অতি-দ্রুত লেজার প্রযুক্তির ব্যবহার। গবেষকরা সোনার একটি পাতলা স্তরকে উত্তপ্ত করতে ৪৫ ফেমটোসেকেন্ড (femtosecond) এক্স-রে লেজার পালস ব্যবহার করেন। বিকিরণের দ্রুত গতির কারণে সোনার পরমাণুগুলো তাদের তাপমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি কম্পাঙ্কে স্পন্দিত হতে থাকে। পরবর্তীকালে, একটি এক্স-রে পালস এই স্পন্দিত পরমাণুগুলোর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিচ্ছুরিত হয়, যা গবেষকদের বিচ্ছুরিত রশ্মির কম্পাঙ্কের পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে সঠিক তাপমাত্রা নির্ণয় করতে সাহায্য করে। এই গবেষণাটি পদার্থবিজ্ঞানের একটি দীর্ঘস্থায়ী তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করেছে, যা 'এনট্রপি ক্যাটাস্ট্রফি' (entropy catastrophe) নামে পরিচিত। এই তত্ত্ব অনুসারে, কোনো কঠিন পদার্থকে তার গলনাঙ্কের তিন গুণের বেশি উত্তপ্ত করলে তা তরলে পরিণত হওয়া উচিত। কিন্তু এই পরীক্ষা দেখিয়েছে যে, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে উত্তপ্ত করলে এই সীমা অতিক্রম করা সম্ভব, যা পদার্থবিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। এই পদ্ধতিটি ভবিষ্যতে ফিউশন শক্তি গবেষণা এবং গ্রহের অভ্যন্তরীন অবস্থা বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।