আর্জেন্টিনার প্যাটাগোনিয়ার গভীরে, প্রায় ৭০ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষভাগে, এক নতুন এবং ভয়ংকর শিকারী প্রাণী বিচরণ করত। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এই প্রাগৈতিহাসিক কুমির প্রজাতির জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে *Kostensuchus atrox*। আর্জেন্টিনার সান্তা ক্রুজ প্রদেশের চোরিলো ফরমেশনে এই আবিষ্কারটি হয়েছে, যা এই অঞ্চলেরLate Cretaceous যুগের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। *Kostensuchus atrox* নামটি এসেছে স্থানীয় প্যাটাগোনিয়ান বাতাসের নাম 'Kosten' এবং মিশরীয় কুমির-মাথাযুক্ত দেবতা 'Sobek' থেকে, যার অর্থ 'ভয়ঙ্কর'। এই নামকরণ প্রাণীটির শক্তিশালী প্রকৃতি এবং তার বাসস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রায় ৩.৫ মিটার (১১.৫ ফুট) লম্বা এবং ২৫০ কেজি (৫৫০ পাউন্ড) ওজনের এই শিকারীটি তার সময়ের একটি অন্যতম শীর্ষ শিকারী ছিল। এর শক্তিশালী চোয়াল এবং ধারালো দাঁতগুলি মাঝারি আকারের ডাইনোসরদের শিকার করার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী ছিল, যা এটিকে তার বাস্তুতন্ত্রের একটি ভয়ংকর অংশ করে তুলেছিল। জীবাশ্মবিদদের মতে, এটি চোরিলো ফরমেশন থেকে প্রাপ্ত দ্বিতীয় বৃহত্তম শিকারী প্রাণী ছিল। এই আবিষ্কারটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি চোরিলো ফরমেশনে প্রাপ্ত প্রথম কুমির জাতীয় প্রাণীর জীবাশ্ম। এটি Peirosauridae পরিবারের অন্তর্গত, যা কুমিরের একটি বিলুপ্ত গোষ্ঠী এবং আধুনিক কুমির ও অ্যালিগেটরের সাথে সম্পর্কিত।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, *K. atrox* মূলত স্থলভাগে বাস করত, যা আধুনিক কুমিরদের থেকে এটিকে আলাদা করে। এর মাথার খুলির গঠন এবং পাশের দিকে অবস্থিত চোখগুলি ইঙ্গিত দেয় যে এটি জলের পরিবর্তে স্থলভাগে শিকার করত। জীবাশ্মবিদ Fernando Novas এবং Diego Pol-এর নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক দল এই আবিষ্কারটি করেছে, যেখানে জাপানি গবেষকরাও যুক্ত ছিলেন। এই জীবাশ্মটি অত্যন্ত ভালোভাবে সংরক্ষিত, যা বিজ্ঞানীদের এই প্রাচীন প্রাণীর শারীরস্থান এবং আচরণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করছে।
চোরিলো ফরমেশন ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্ম ক্ষেত্র, যেখানে ডাইনোসর, কচ্ছপ, ব্যাঙ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। *Kostensuchus atrox*-এর আবিষ্কার এই অঞ্চলেরLate Cretaceous যুগের বাস্তুতন্ত্রের একটি সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরেছে। এটি প্রমাণ করে যে সেই সময়ে কুমির জাতীয় প্রাণীরা ডাইনোসরদের সাথে সহাবস্থান করত এবং তারাও খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষে অবস্থান করত। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে এই আবিষ্কারটি মহাদেশগুলির মধ্যে জৈবিক সংযোগ এবংLate Cretaceous যুগের পরিবেশ সম্পর্কে আরও নতুন তথ্য উন্মোচন করবে। এই ধরনের আবিষ্কারগুলি বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্ব এবং এই ধরনের জীবাশ্ম ক্ষেত্রগুলির সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।