একটি যুগান্তকারী জাপানি গবেষণা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে স্ট্রিকড শিয়ারওয়াটার (Calonectris leucomelas) পাখির পুষ্টিচক্রের অসাধারণ ভূমিকার উপর আলোকপাত করেছে। এই সামুদ্রিক পাখিরা উড়ন্ত অবস্থায় তাদের মলত্যাগ করে, যা নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ এবং যা সমুদ্রকে প্রাকৃতিক সার হিসেবে পুষ্টি জোগায়। এই পুষ্টি উপাদানগুলি প্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে এবং সামুদ্রিক খাদ্য শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করে তোলে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানের অভাব রয়েছে, সেখানে এই পাখির মল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জাপানের ফানাকোশি ওশিমা দ্বীপে ১৫টি স্ট্রিকড শিয়ারওয়াটারের উপর ক্যামেরা স্থাপন করে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই পাখিরা প্রায় ৪ থেকে ১০ মিনিট অন্তর উড়ন্ত অবস্থায় মলত্যাগ করে। ধারণা করা হয়, এটি তাদের নিজেদের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা বা জলজ শিকারীদের এড়ানোর একটি কৌশল হতে পারে। এই মলত্যাগ প্রক্রিয়াটি কেবল পাখির ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির জন্যই নয়, বরং বৃহত্তর সামুদ্রিক পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত উপকারী।
স্ট্রিকড শিয়ারওয়াটারের এই পুষ্টি বিতরণের প্রক্রিয়াটি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। এই পাখিরা তাদের দীর্ঘ অভিবাসন পথে (যা উত্তর নিউ গিনি, আরাফুরা সাগর এবং দক্ষিণ চীন সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত) ৫,৪০০ কিমি পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করে পুষ্টি উপাদান ছড়িয়ে দেয়। এই পাখিদের একটি বিরল দর্শন মে ২০২৫ সালে ডেলাওয়্যার উপসাগরের কাছে দেখা গেছে, যা তাদের অভিবাসন পথের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এটি উত্তর আটলান্টিকের প্রথম নথিভুক্ত ঘটনা। সামুদ্রিক পাখির গুয়ানো প্রবাল প্রাচীরকে ব্লিচিংয়ের পর পুনরুদ্ধার করতেও ভূমিকা রাখতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে, সামুদ্রিক পাখির মল (গুয়ানো) মানুষের কাছে সার, গানপাউডার এবং এমনকি ত্বকের যত্নের পণ্য হিসেবেও মূল্যবান ছিল। ইনকা সভ্যতা গুয়ানোকে এতটাই মূল্যবান মনে করত যে তারা এর ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করত এবং পাখিদের বিরক্ত করার জন্য মৃত্যুদণ্ড দিত। বর্তমান গবেষণাটি এই পাখিদের পরিবেশগত গুরুত্বকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে।
প্রায় ৩ মিলিয়ন পাখির বিশ্ব জনসংখ্যা নিয়ে, স্ট্রিকড শিয়ারওয়াটারগুলি তাদের উড়ন্ত অবস্থায় মলত্যাগের মাধ্যমে সমুদ্রের উর্বরতা বৃদ্ধিতে এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করে। এই পাখিদের সংরক্ষণ নিশ্চিত করা কেবল তাদের নিজস্ব প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই নয়, বরং আমাদের গ্রহের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্যও অপরিহার্য। তাদের এই প্রাকৃতিক সার বিতরণের প্রক্রিয়াটি সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য এবং খাদ্য শৃঙ্খলের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বিশ্বব্যাপী, আনুমানিক ৮৪০ মিলিয়ন সামুদ্রিক পাখি পুষ্টিচক্রে অবদান রাখে, প্রতি বছর প্রায় ৫৯১,০০০ টন নাইট্রোজেন এবং ৯৯,০০০ টন ফসফরাস নির্গত করে।
১৯ শতকে গুয়ানো বাণিজ্য 'গুয়ানো যুগ'-এর জন্ম দেয় এবং দূরবর্তী পাখির দ্বীপগুলির উপনিবেশকরণকে উৎসাহিত করে।