সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ডলফিন পডগুলি পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত কারণে তাদের পরিযায়ী পথে পরিবর্তন আনছে। এই পরিবর্তনগুলি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং এই বুদ্ধিমান প্রাণীদের অভিযোজন ক্ষমতা বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশান্ত মহাসাগরের মতো অঞ্চলে পরিচালিত গবেষণাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে সমুদ্র স্রোতের পরিবর্তন এবং খাদ্যের সহজলভ্যতা ডলফিনদের ভ্রমণ এবং তাদের ভ্রমণের সময়কে প্রভাবিত করছে। এটি তাদের চলাচলের গতিশীল প্রকৃতি এবং তাদের জীবনযাত্রাকে নিয়ন্ত্রণকারী জটিল কারণগুলির উপর আলোকপাত করে।
ডলফিনরা কেবল মাছ এবং স্কুইডই খায় না, বরং তারা জলজ খাদ্য শৃঙ্খল বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা দুর্বল এবং অসুস্থ মাছ খেয়ে বাস্তুতন্ত্রকে স্বাস্থ্যকর রাখে। পরিবেশগত পরিবর্তনের মুখে ডলফিনদের এই অভিযোজন ক্ষমতা তাদের বুদ্ধিমত্তারই প্রতিফলন। তবে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণের মতো বিষয়গুলি তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, এবং সমুদ্রের অম্লীকরণ ডলফিনদের আবাসস্থল এবং খাদ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই পরিবর্তনগুলি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করছে, যা কেবল ডলফিনদের জন্যই নয়, অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের জন্যও উদ্বেগজনক। গবেষণায় দেখা গেছে যে সমুদ্র উষ্ণায়নের কারণে ডলফিনের শিকার সহ সামুদ্রিক প্রজাতিগুলি প্রতি দশকে গড়ে ৫.৯ কিলোমিটার গতিতে মেরুর দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ, যা জলের তাপমাত্রা গড় থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়িয়েছিল, ডলফিনের বেঁচে থাকার হার ১২% কমিয়ে দিয়েছিল এবং ছয় বছর পর্যন্ত তাদের প্রজনন সাফল্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছিল।
সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন ডলফিন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে হুমকির সম্মুখীন। এই পরিবর্তনগুলি তাদের পরিযায়ী পথ এবং খাদ্যাভ্যাসে প্রভাব ফেলছে। কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে ডলফিনদের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা তাদের পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করতে পারে। সংরক্ষণ সংস্থাগুলি, যেমন মেরিন মেমাল কনজারভেন্সি, ফ্লোরিডায় অবস্থিত একটি অলাভজনক সংস্থা, গবেষণা, উদ্ধার, পুনর্বাসন এবং শিক্ষার মাধ্যমে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী ও তাদের বাসস্থান রক্ষায় কাজ করে, যেখানে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের পুনর্বাসনের সাফল্যের হার ৬৮%, যা দেশের গড় থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, এই পরিবর্তনগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা ডলফিনদের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য এবং প্রজনন ক্ষেত্রগুলি রক্ষা করার জন্য কাজ করে।
মানুষের কার্যকলাপ, যেমন দূষণ এবং অতিরিক্ত মাছ ধরা, ডলফিনদের পরিযায়ী পথকে আরও ব্যাহত করতে পারে। এই চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায়, সরকার এবং সংস্থাগুলি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। উদাহরণস্বরূপ, অবৈধ মাছ ধরা নিয়ন্ত্রণে ড্রোন ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা এবং ডলফিনদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। ডলফিনদের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকে থাকার ক্ষমতা তাদের অভিযোজন এবং বুদ্ধিমত্তার এক অসাধারণ উদাহরণ। তাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর।