সম্প্রতি আসামের মানাস জাতীয় উদ্যানে কালো চিতার (black panther) দেখা মেলায় বন্যপ্রাণী প্রেমীদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই বিরল প্রজাতির চিতাদের উপস্থিতি পার্কটির সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে, মানাস জাতীয় উদ্যানের বান্ Хабаровী রেঞ্জে দুই পর্যটকের ক্যামেরায় ধরা পড়ে দুটি কালো চিতা। তারা রাস্তার উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, যা এক অসাধারণ দৃশ্য ছিল। এই ঘটনাটি পার্কের মধ্যে কালো চিতার উপস্থিতির প্রমাণ আরও জোরালো করে। এর আগে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে, পার্কের মূল প্রবেশদ্বারের কাছে একটি কালো চিতার মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, যা বন বিভাগের তদন্তের কারণ হয়েছিল। এই ঘটনাগুলি মানাস জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরে।
কালো চিতা আসলে চিতাবাঘেরই একটি বিরল রূপ, যা জিনগত পরিবর্তনের ফলে কালো রঙের হয়। এদের কালো রঙের কারণ হল মেলানিজম (melanism), যা শরীরে মেলানিন নামক রঞ্জকের আধিক্য। এই জিনগত পরিবর্তন চিতাদের দেখতে কালো করে তোলে, তবে তাদের গায়ের ডোরাকাটা দাগগুলিও বিদ্যমান থাকে, যা কেবল সঠিক আলোতেই স্পষ্ট দেখা যায়। এই বিশেষ জিনগত বৈশিষ্ট্য সাধারণত বংশানুক্রমিক হয়, যেখানে বাবা-মা উভয়ের কাছ থেকে জিন পেলে তবেই শাবকের এই রূপ দেখা যায়। এই বিরলতার কারণেই এদের দেখা পাওয়া এক বিশেষ সৌভাগ্যের বিষয়।
মানাস জাতীয় উদ্যান, যা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান (UNESCO World Heritage Site) হিসেবে স্বীকৃত, এই ধরনের বিরল প্রাণীদের আশ্রয়স্থল। এই উদ্যানটি শুধু কালো চিতার জন্যই নয়, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভারতীয় গণ্ডার, এশীয় হাতি এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল। এখানে প্রায় ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪০ প্রজাতির পাখি এবং ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। এছাড়াও, হস্পিড হেয়ার, গোল্ডেন ল্যাঙ্গুর এবং রুফড টার্টেলের মতো বিরল প্রজাতির প্রাণীও এখানে পাওয়া যায়।
বন বিভাগ এবং পরিবেশ কর্মীরা কালো চিতা সহ সকল বন্যপ্রাণীর সুরক্ষার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চোরাশিকার, বনভূমি ধ্বংস এবং মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংঘাতের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন সংরক্ষণ প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। এই ধরনের sightings, যেমন কালো চিতার দেখা মেলা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং এই অমূল্য প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও একবার মনে করিয়ে দেয়। এই ঘটনাগুলি প্রমাণ করে যে, মানাস জাতীয় উদ্যান সত্যিই জীববৈচিত্র্যের এক অমূল্য ভান্ডার।