একটি সাম্প্রতিক গবেষণা, যা প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, ক্যানিড (যেমন নেকড়ে ও শিয়াল) এবং ফেলিড (যেমন পুমা ও চিতাবাঘ) প্রাণীদের মধ্যে চলাচল পদ্ধতির সুস্পষ্ট পার্থক্য উন্মোচন করেছে। বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা ১,২০০ টিরও বেশি প্রাণীর ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে ক্যানিড প্রাণীরা সাধারণত নির্দিষ্ট ও অনুমানযোগ্য পথে চলাচল করে, যেখানে ফেলিড প্রাণীরা আরও এলোমেলো ও বিস্তৃতভাবে বিচরণ করে। এই ভিন্নতার মূলে রয়েছে তাদের খাদ্যাভ্যাস, শিকার কৌশল এবং সামাজিক কাঠামোর পার্থক্য।
ক্যানিড প্রাণীরা প্রায়শই সর্বভুক এবং দলবদ্ধভাবে শিকার করে, যা তাদের দীর্ঘ দূরত্বে ধাওয়া করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, ফেলিড প্রাণীরা একাকী শিকারী এবং কঠোরভাবে মাংসাশী, যারা অতর্কিত হামলা বা লুকিয়ে শিকার করার কৌশল অবলম্বন করে। এই বিবর্তনীয় পার্থক্যগুলি তাদের চলাচল পদ্ধতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ক্যানিড প্রাণীদের সুনির্দিষ্ট পথ ব্যবহারের প্রবণতা তাদের ঘ্রাণশক্তির তীক্ষ্ণতার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে, যা তাদের পরিচিত পথ মনে রাখতে এবং ব্যবহার করতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্যানিড প্রাণীরা তাদের বাসস্থানে ১৫ থেকে ৩৩ শতাংশ বেশি 'রুটওয়ে' বা নিয়মিত ব্যবহৃত পথ তৈরি করে, যা ফেলিডদের তুলনায় অনেক বেশি।
এই নির্দিষ্ট পথগুলি তাদের জন্য সুবিধা নিয়ে এলেও, মানুষের তৈরি বাধা যেমন রাস্তাঘাটের কারণে তারা বেশি বিপদের সম্মুখীন হয়। অন্যদিকে, ফেলিডদের বিস্তৃত ও বিক্ষিপ্ত চলাচল তাদের শিকারের জন্য সহায়ক হলেও, তাদের সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ করা কঠিন করে তোলে। এই গবেষণাটি কেবল প্রাণীদের আচরণ সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া বাড়ায় না, বরং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
বিজ্ঞানীরা ফিজিক্স-ভিত্তিক মডেল ব্যবহার করে প্রাণীদের এই 'রুটওয়ে' গুলি চিহ্নিত করেছেন, যা এই গবেষণার একটি আন্তঃবিভাগীয় পদ্ধতির উদাহরণ। এই ধরণের গবেষণা প্রাণীদের বাস্তুতন্ত্রে তাদের ভূমিকা এবং মানব কার্যকলাপের সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়া বোঝার জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটি আমাদের শেখায় যে প্রতিটি প্রজাতির নিজস্ব অনন্য অভিযোজন রয়েছে যা তাদের টিকে থাকার কৌশল নির্ধারণ করে এবং সংরক্ষণের পরিকল্পনা করার সময় এই ভিন্নতাগুলি বিবেচনা করা অপরিহার্য।