ফ্লেমিঙ্গোদের বার্ধক্য গবেষণা: পরিযায়নের মাধ্যমে দীর্ঘ জীবনের রহস্য উন্মোচন

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

একটি যুগান্তকারী গবেষণা, যা প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত হয়েছে, ফ্লেমিঙ্গোদের জীবনচক্র এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ফ্রান্সের ক্যামার্গ অঞ্চলের ট্যুর ডু ভ্যালাট ইনস্টিটিউটের গবেষকরা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চিহ্নিত ফ্লেমিঙ্গোদের উপর তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, যারা পরিযায়ী জীবনযাপন করে, তারা তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সঙ্গীদের তুলনায় ধীর গতিতে বার্ধক্যের শিকার হয়।

এই গবেষণায়, ক্যামার্গ অঞ্চলে সারা বছর ধরে বসবাসকারী ফ্লেমিঙ্গোদের (রেসিডেন্ট) সাথে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল বরাবর বার্ষিক পরিযানকারী ফ্লেমিঙ্গোদের (মাইগ্র্যান্ট) জীবনযাত্রার তুলনা করা হয়েছে। দেখা গেছে যে, রেসিডেন্ট ফ্লেমিঙ্গোরা জীবনের প্রথম দিকে উচ্চতর বেঁচে থাকার হার এবং প্রজনন সাফল্য অর্জন করে। তবে, জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে তাদের বার্ধক্যের হার প্রায় ৪০% দ্রুততর হয়, যা পরিযায়ী ফ্লেমিঙ্গোদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এই পর্যবেক্ষণ ইঙ্গিত দেয় যে, কোটি কোটি প্রাণী যে পরিযান আচরণ করে, তা বার্ধক্যের গতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এটি জীবনের প্রাথমিক কর্মক্ষমতা এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতার প্রতিফলন ঘটায়, যেখানে পরিযায়ী পাখিরা পরবর্তী জীবনে ধীর বার্ধক্য থেকে উপকৃত হয়।

গবেষণায় আরও জানা গেছে যে, রেসিডেন্ট ফ্লেমিঙ্গোদের বার্ধক্য প্রক্রিয়া গড়ে ২০.৪ বছর বয়সে শুরু হয়, যেখানে পরিযায়ী ফ্লেমিঙ্গোদের ক্ষেত্রে এই বয়স ২১.৯ বছর। ট্যুর ডু ভ্যালাট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক এবং সহ-লেখক জোসেলিন শ্যাম্পাগন ব্যাখ্যা করেছেন যে, এই পার্থক্য সম্ভবত জীবনের প্রথম দিকে তীব্রভাবে বেঁচে থাকা এবং পরবর্তী জীবনে সুস্থ থাকার মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষার ফল। তিনি বলেন, "রেসিডেন্টরা প্রথম দিকে তীব্রভাবে বাঁচে, কিন্তু পরে এর মূল্য দিতে হয়।" অন্যদিকে, পরিযায়ী পাখিরা জীবনের শুরুতে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও, দীর্ঘমেয়াদী জীবনীশক্তি ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

এই ৪৪ বছরের দীর্ঘ গবেষণা, যা ১৯৭৭ সালে শুরু হয়েছিল এবং ফ্লেমিঙ্গোদের পায়ে রিং পরিয়ে দূর থেকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তা প্রাণীদের বার্ধক্য প্রক্রিয়া বোঝার জন্য এক অমূল্য ডেটাসেট তৈরি করেছে। সিএনআরএস-এর গবেষক সেবাস্টিয়ান রোকস এই ফলাফলকে মানব বার্ধক্য এবং দীর্ঘায়ু গবেষণার ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন। তিনি বলেন, "জীবনের পছন্দ, যেমন পরিযান, বার্ধক্যের গতিকে প্রভাবিত করে, তা এই গবেষণা প্রমাণ করে।" এটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, বার্ধক্য একটি স্থির প্রক্রিয়া নয়, বরং আচরণ এবং পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

সুতরাং, ফ্লেমিঙ্গোদের এই জীবনযাত্রা কেবল তাদের প্রজাতির জন্যই নয়, বরং তাদের আবাসস্থল, অর্থাৎ ভূমধ্যসাগরীয় জলাভূমিগুলির সংরক্ষণের গুরুত্বও তুলে ধরে। এই গবেষণা প্রাণিজগতের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা এবং তাদের দীর্ঘায়ুর উপর এর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও সমৃদ্ধ করে। পরিযানের মতো একটি আচরণগত সিদ্ধান্ত কীভাবে জীবনের গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে এবং বার্ধক্যকে মন্থর করতে পারে, তা ফ্লেমিঙ্গোদের এই অধ্যয়ন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

উৎসসমূহ

  • ScienceDaily

  • Flamingos reveal their secret to aging

  • Migratory Flamingos Age Differently From Resident Ones, Offering a New Clue About Getting Old

  • What flamingos can teach us about the mysteries of aging

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।