বওহেড তিমির দীর্ঘ জীবনের রহস্য: জিনগত কারণ ও সংরক্ষণ

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

বওহেড তিমি (Balaena mysticetus) পৃথিবীর দীর্ঘতমজীবী স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে পরিচিত, যাদের জীবনকাল ২০০ বছরেরও বেশি হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই অসাধারণ দীর্ঘায়ুর রহস্য উন্মোচনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যেমন চোখের লেন্স বিশ্লেষণ এবং পুরনো হার্পুন বর্শার সন্ধান, তাদের বয়স নির্ধারণে সহায়ক হয়েছে। ২০০৭ সালে আলাস্কায় প্রাপ্ত একটি বওহেড তিমির দেহে উনিশ শতকের শেষের দিকের একটি হার্পুন বর্শার ডগা পাওয়া যায়, যা তিমিটির আনুমানিক বয়স ১১৫ বছর বলে ধারণা দেয়। চোখের লেন্সের অ্যাসপার্টিক অ্যাসিডের স্ফটিক ব্যবহার করে আরও সুনির্দিষ্টভাবে বয়স নির্ণয় করা হয়। ১৯৯৯ সালের একটি গবেষণায় আলাস্কায় ধরা পড়া বওহেড তিমিদের মধ্যে ১৩৫ থেকে ১৮০ বছর বয়সী এবং একটি ২০০ বছরেরও বেশি বয়সী তিমি পাওয়া গিয়েছিল।

বওহেড তিমি আর্কটিক এবং সাব-আর্কটিক অঞ্চলের ঠান্ডা জলে বাস করে। এদের বিশাল শরীর এবং পুরু চর্বির স্তর এদের উষ্ণ রাখে। এরা ১৮.৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা এবং ৯০,৭১০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজনের হতে পারে। এদের পৃষ্ঠদেশে কোনো ডোরসাল ফিন (dorsal fin) না থাকায় বরফের নিচে সাঁতার কাটতে সুবিধা হয়। এরা বেইলিন (baleen) প্লেটের সাহায্যে প্ল্যাঙ্কটন ছেঁকে খায়। এই তিমিদের দীর্ঘ জীবনের রহস্য তাদের জিনের মধ্যে নিহিত থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। CDKN2C জিনের একটি বিশেষ রূপ এদের দীর্ঘায়ু লাভে সহায়তা করে বলে ধারণা করা হয়, যা কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ এবং প্রোগ্রামড সেল ডেথ (programmed cell death) প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রাশিয়ায় বওহেড তিমি রেড বুকে তালিকাভুক্ত এবং একটি বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত হলেও, চুকোটকা এবং আলাস্কার কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য এদের শিকারের কোটা রয়েছে। এই শিকারগুলি আন্তর্জাতিক তিমি কমিশন (International Whaling Commission - IWC) দ্বারা অনুমোদিত এবং এদের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের কার্যকলাপের কারণে এদের বাসস্থান হুমকির মুখে পড়লেও, বিগত দশকগুলিতে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার ফলে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে, বেরিং-চুকচি-বোফোর্ট (Bering-Chukchi-Beaufort) উপ-জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধির হার প্রায় ৩% বলে অনুমান করা হয়। বর্তমানে এই উপ-জনসংখ্যা প্রায় ১০,০০০ বলে ধারণা করা হয়, যা আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ প্রচেষ্টার কার্যকারিতা প্রমাণ করে। এই দীর্ঘজীবী প্রাণীদের জীবনযাত্রা বোঝা কার্যকর সংরক্ষণ কৌশল তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞানীরা বওহেড তিমির জিনোম নিয়ে গবেষণা করে দীর্ঘ জীবনের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করছেন। তাদের মতে, CDKN2C জিনের একটি বিশেষ রূপ কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা এই তিমিদের দীর্ঘায়ু লাভে সহায়ক। এই জিনগত বৈশিষ্ট্য বওহেড তিমিদের অনন্য করে তুলেছে এবং তাদের সংরক্ষণের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক তিমি কমিশন (IWC) কর্তৃক অনুমোদিত কোটা অনুযায়ী আলাস্কা এবং রাশিয়ার আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি বওহেড তিমির শিকার করে থাকে। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের জন্য মোট ৩৯২টি বওহেড তিমির একটি ব্লক কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ৬৭টি তিমি শিকারের অনুমতি রয়েছে। এই সংরক্ষণ প্রচেষ্টা এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের সীমিত শিকারের মাধ্যমে বওহেড তিমিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বেরিং-চুকচি-বোফোর্ট (Bering-Chukchi-Beaufort) উপ-জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধির হার প্রায় ৩% বলে অনুমান করা হয়। বর্তমানে এই উপ-জনসংখ্যা প্রায় ১০,০০০ বলে ধারণা করা হয়।

উৎসসমূহ

  • УНІАН

  • Russian Traveler

  • Наука и жизнь

  • Газета.Ru

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।