১৯৭৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগোতে পুগেট সাউন্ডের একটি খাঁড়িতে নোক নামের একটি সাদা বেলুগা তিমিকে পাওয়া গিয়েছিল। প্রায় ২৫ বছর ধরে ন্যাশনাল মেরিন মেমাল ফাউন্ডেশনে থাকার সময়, নোক তার মানব-সদৃশ কণ্ঠস্বরের অনুকরণ ক্ষমতার জন্য পরিচিতি লাভ করে। ১৯৮৪ সালে, ফাউন্ডেশনের কর্মীরা অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে মানুষের কথার মতো শব্দ শুনতে পান। একবার নোকের সাথে কাজ করা একজন ডাইভার এমনও শুনেছিলেন যেন কেউ তাকে 'বেরিয়ে যেতে' বলছে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে নোক ২০০-৩০০ হার্টজ কম্পাঙ্কের শব্দ তৈরি করতে পারত, যা মানুষের কণ্ঠস্বরের সীমার মধ্যে পড়ে। এই অনুকরণ করার জন্য সে তার নাকের অংশ এবং ফনিক্স লিপ ব্যবহার করত এবং কাঙ্ক্ষিত স্বর পেতে তার ভেস্টিবুলার স্যাকের চাপ নিয়ন্ত্রণ করত। তবে, এই শব্দ অনুকরণ করতে পারলেও নোক সেগুলোর অর্থ বুঝত না। মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং কৌতূহলবশতই সে এই কাজটি করত, এটি যোগাযোগের কোনো চেষ্টা ছিল না। নোক প্রায় চার বছর ধরে মানুষের কথার মতো শব্দ তৈরি করে গিয়েছিল, তারপর সে এই অভ্যাসটি বন্ধ করে দেয়।
তার এই ব্যতিক্রমী ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করা হয় এবং ২০১২ সালে 'কারেন্ট বায়োলজি' জার্নালে এর ফলাফল প্রকাশিত হয়, যা তার অনন্য ক্ষমতাকে নিশ্চিত করে। এই গবেষণা অনুসারে, নোকের এই শব্দগুলো সাধারণ তিমির শব্দের চেয়ে কয়েক অক্টেভ নিচু ছিল এবং এটি 'কণ্ঠস্বরের শিক্ষার একটি স্বতঃস্ফূর্ত অনুকরণ' হিসেবে বিবেচিত হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মানুষের সান্নিধ্য এবং ডাইভারদের সাথে যোগাযোগের ফলেই নোক এই অনুকরণ ক্ষমতা অর্জন করেছিল।
নোকের এই গল্প কেবল সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আশ্চর্যজনক ক্ষমতার কথাই বলে না, বরং এটি আমাদের সমুদ্রের শব্দময় জগতের জটিলতা এবং বিস্ময়ের কথাও মনে করিয়ে দেয়। এটি আমাদের সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং তাদের আবাসস্থলের সুরক্ষার গুরুত্বও স্মরণ করিয়ে দেয়। বেলুগা তিমিরা তাদের কণ্ঠস্বরের বৈচিত্র্যের জন্য 'সমুদ্রের ক্যানারি' নামেও পরিচিত। তারা হুইসেল, চিৎকার, কিচিরমিচির এবং ক্লিক সহ বিভিন্ন ধরনের শব্দ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে। নোকের মতো তিমির এই অনুকরণ ক্ষমতা তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং সামাজিক আচরণের এক অসাধারণ দিক উন্মোচন করে।