অসমের প্রকৃতিতে ফিরছে বন্দী-প্রজননকৃত শকুন: সংরক্ষণ কর্মসূচিতে নতুন মাইলফলক

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

অসম রাজ্য এক ঐতিহাসিক সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে ২০২৬ সালের জানুয়ারির শুরুতে বন্দী দশায় জন্ম নেওয়া বিপন্নপ্রায় শকুনদের প্রথমবার প্রকৃতিতে মুক্ত করা হবে। এই উদ্যোগটি ভারতের শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনা, ২০২০-২০২৫ এর অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি (BNHS), যা সারা ভারতে তাদের সংরক্ষণ প্রজনন কেন্দ্রগুলিতে ৮০০-এরও বেশি শকুন সফলভাবে লালন করেছে, তারা এই মুক্তির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে।

এই প্রথম ধাপে মোট ছয়টি শকুনকে প্রকৃতিতে ছাড়া হবে, যার মধ্যে তিনটি সংকটাপন্ন স্লেণ্ডার-বিল্ড শকুন এবং বাকি তিনটি হোয়াইট-রাম্পড শকুন। এদেরকে কামরূপ এবং বিশ্বনাথ জেলায় 'সফট রিলিজ মেথড' বা মৃদু মুক্তি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকৃতিতে ছাড়া হবে। মুক্তির পূর্বে, পাখিদের কমপক্ষে তিন মাস বিশ্বনাথের নিকটবর্তী রিলিজ অ্যাভিয়ারিতে রাখা হবে, যাতে তারা পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং আশেপাশের বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এই পাখিদের চূড়ান্তভাবে প্রকৃতিতে ছাড়ার আগে স্যাটেলাইট ট্যাগ লাগানো হবে, যা একটি নিবেদিত দল দ্বারা স্থল পর্যবেক্ষণ এবং স্যাটেলাইট ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখতে সাহায্য করবে।

শকুন প্রজাতির এই ব্যাপক হ্রাস মূলত গবাদি পশুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত মারাত্মক বিষাক্ত ঔষধ ডাইক্লোফেনাক-এর কারণে ঘটেছে। এই ব্যথানাশক ঔষধের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় ১৯৯০-এর দশক থেকে তিন প্রজাতির গিপস শকুন প্রায় ৯৯% হ্রাস পেয়েছিল। যদিও ২০০৬ সালে ভারত সরকার ডাইক্লোফেনাক-এর পশুচিকিৎসা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল, তবুও এই বিষাক্ত ওষুধের অবশিষ্টাংশ পরিবেশে এবং গবাদি পশুর দেহে পাওয়া যাচ্ছে। সংরক্ষণ প্রচেষ্টা সফল করার জন্য, পশুচিকিৎসকদের মেলোক্সিকাম এবং টলফেনামিক অ্যাসিডের মতো শকুন-সুরক্ষিত ঔষধ ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।

বিএনএইচএস-এর ডিরেক্টর কিশোর রিতে এই কর্মসূচির সাফল্য শকুন পুনর্বাসন কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। বিএনএইচএস-এর সিনিয়র বিজ্ঞানী ডঃ শচীন রানাডে উল্লেখ করেছেন যে, শকুনরা নিরাপদ এবং অনিরাপদ মৃতদেহগুলির মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না, ফলে তারা বিষক্রিয়ায় শিকার হয়। অসম রাজ্য বর্তমানে ভারতের মধ্যে স্লেণ্ডার-বিল্ড শকুনদের একমাত্র প্রধান ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, যেখানে এই প্রজাতির প্রায় সমস্ত পরিচিত ১২টি বাসা বাঁধার স্থান রেকর্ড করা হয়েছে।

এই পুনঃপ্রবর্তনের জন্য কামরূপ ও বিশ্বনাথ জেলা নির্বাচন করা হয়েছে, কারণ এই অঞ্চলগুলি শকুনের প্রাকৃতিক পরিসরের মধ্যে পড়ে এবং এখানে ইতিমধ্যেই ছোট ঝাঁক বিদ্যমান রয়েছে; বিশেষত বিশ্বনাথ কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের কাছাকাছি অবস্থিত। এই সংরক্ষণ প্রচেষ্টা আসাম বন বিভাগ এবং রয়্যাল সোসাইটি ফর প্রোটেকশন অফ বার্ডস (RSPB)-এর সহায়তায় চলছে, যেখানে স্থানীয় গ্রামবাসীদের শকুনদের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য গ্রাম-স্তরের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শকুনরা গবাদি পশুর মৃতদেহ ভক্ষণ করে পরিবেশকে পরিষ্কার রাখতে এবং রোগ সংক্রমণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক খাদ্য শৃঙ্খল পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হবে।

20 দৃশ্য

উৎসসমূহ

  • News18

  • The Hindu

  • Telangana Today

  • Northeast News

  • Deccan Herald

  • Sentinel (Assam)

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।