একটি সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আমাদের শরীরের জৈবিক বার্ধক্য কোনো পূর্বনির্ধারিত বা প্রোগ্রাম করা ঘটনা নয়, বরং সময়ের সাথে সাথে কোষগুলিতে জমা হওয়া এলোমেলো বা স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষতির ফল। ইউনিভার্সিটি অফ কোলনের গবেষকদের দ্বারা 'নেচার এজিং' জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা এই ধারণার পক্ষে প্রমাণ সরবরাহ করে যে, জৈবিক বয়স পরিমাপকারী 'এজিং ক্লকস' আসলে এই ক্রমবর্ধমান কোষীয় ক্ষতিরই প্রতিফলন।
এজিং ক্লকস হলো অ্যালগরিদম যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য ও আণবিক ডেটা ব্যবহার করে জৈবিক বয়স অনুমান করে। যদিও এগুলি কালানুক্রমিক বয়স (জন্মের পর থেকে অতিবাহিত বছর) নির্ভুলভাবে পূর্বাভাস দিতে পারে, তবে এখন বোঝা যাচ্ছে যে এদের নির্ভুলতা মূলত কোষের মধ্যে ঘটে যাওয়া এলোমেলো পরিবর্তনের পরিমাণ নির্ধারণ করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। এই পরিবর্তনগুলি ঘটে কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের স্বাভাবিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের প্রক্রিয়াগুলি কম কার্যকর হয়ে পড়ে। ইউনিভার্সিটি অফ কোলনের বিজ্ঞানীরা, ডেভিড মেয়ার এবং অধ্যাপক ডঃ Björn Schumacher-এর নেতৃত্বে, তাঁদের গবেষণায় সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, এই স্বতঃস্ফূর্ত বা এলোমেলো পরিবর্তনের সঞ্চয়ই এজিং ক্লকস তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। এই ক্লকগুলি ধূমপান বা ক্যালোরি গ্রহণের মতো জীবনযাত্রার কারণগুলির প্রতি সংবেদনশীল, যা নির্দেশ করে যে এগুলি একটি পূর্বনির্ধারিত বার্ধক্য প্রক্রিয়ার পরিবর্তে ত্রুটিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার সামগ্রিক প্রভাব পরিমাপ করে।
এই নতুন উপলব্ধি বার্ধক্যকে একটি প্রোগ্রামড প্রক্রিয়া হিসেবে দেখার পরিবর্তে একটি স্বতঃস্ফূর্ত বা এলোমেলো ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করে। এর অর্থ হলো, আমাদের শরীরের কোষগুলিতে যে ক্ষতি জমা হয়, তা কোনো নির্দিষ্ট জিনগত নকশা অনুসরণ করে ঘটে না, বরং এটি বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক ত্রুটি এবং পরিবেশগত কারণগুলির সম্মিলিত ফল। এই পরিবর্তনগুলি, যেমন ডিএনএ-তে ত্রুটি বা প্রোটিনের ভুল ভাঁজ হওয়া, সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে এবং এজিং ক্লকস এই জমা হওয়া ক্ষতিকেই পরিমাপ করে।
এই দৃষ্টিভঙ্গি বিবর্তনীয় তত্ত্বের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রজনন পরিপক্কতা অর্জনের পর প্রাকৃতিক নির্বাচনের চাপ কমে যায়, যা কোষীয় ক্ষতির (যেমন ডিএনএ মিউটেশন এবং প্রোটিন মিসফোল্ডিং) জমা হওয়ার সুযোগ করে দেয়, কারণ এই ক্ষতিগুলির তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব বেঁচে থাকা বা প্রজননের উপর পড়ে না। বার্ধক্যকে একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া হিসেবে বোঝা গেলে, চিকিৎসার লক্ষ্য কোষীয় মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ পথগুলিকে শক্তিশালী করার দিকে সরে যায়। ডিএনএ মেরামত, মাইটোকন্ড্রিয়াল কার্যকারিতা এবং প্রোটিন কোয়ালিটি কন্ট্রোল উন্নত করার কৌশলগুলি স্বাস্থ্যকর বার্ধক্য প্রচার এবং 'হেলথস্প্যান' (সুস্থ জীবনকাল) বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় পথ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কোষের বর্জ্য অপসারণকারী লাইসোসোমগুলির মেরামত প্রক্রিয়া (যেমন PITT pathway) এবং NAD+ নামক অণুর ভূমিকা, যা ডিএনএ মেরামতের জন্য অপরিহার্য, তা স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই গবেষণাগুলি ভবিষ্যতে বার্ধক্য-সম্পর্কিত রোগগুলি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।