২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক পেট ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস (International Pet Photography Awards) বিশ্বজুড়ে পোষা প্রাণীদের মনোমুগ্ধকর চিত্রকর্মের এক অসাধারণ প্রদর্শনীকে সম্মান জানিয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় রেকর্ড সংখ্যক ৪,০১১টি এন্ট্রি জমা পড়েছিল, যা ৪৫টি দেশ থেকে আগত প্রতিযোগীদের সৃজনশীলতার প্রতিফলন। কুকুর, বিড়াল, ঘোড়া থেকে শুরু করে সাপ, খরগোশ, টিয়া এবং টিকটিকি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের পোষা প্রাণী তাদের অনন্য ভঙ্গিমায় ক্যামেরাবন্দী হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পেট ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার (International Pet Photography of the Year) খেতাব জিতেছেন কেটি ব্রকম্যান (Katie Brockman)। তাঁর পোর্টফোলিওতে নিজের পোষা কুকুর ক্যাল্ডওয়েল (Caldwell) এবং বিভিন্ন উদ্ধার করা প্রাণীর ছবি ছিল। ব্রকম্যান বিশেষভাবে উদ্ধার করা পোষা প্রাণীদের আকর্ষণ এবং তাদের ভালোবাসার বন্ধন তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তাঁর একটি বিশেষ ছবিতে একটি খরগোশকে তার অস্বাভাবিক চিহ্নের সাথে দেখানো হয়েছে, যা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। কেটি ব্রকম্যানের পোর্টফোলিও তার উদ্ভাবনী কাজের জন্য "ক্রিয়েটিভ" বিভাগেও উল্লেখ করা হয়েছিল।
২০২৪ সালে একটি নতুন বিভাগ, 'ওপেন পোর্ট্রেট' (Open Portrait) চালু করা হয়েছিল। এই বিভাগটি মূলত কুকুর, বিড়াল এবং ঘোড়ার বাইরে অন্যান্য ধরণের পোষা প্রাণীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এলেন রিউস (Ellen Reus) সাপের মনোমুগ্ধকর স্টুডিও পোর্ট্রেটের জন্য এই বিভাগে জয়ী হয়েছেন। তিনি আনন্দ প্রকাশ করেছেন যে সরীসৃপ প্রাণীরাও যে ক্যামেরার সামনে কতটা আকর্ষণীয় হতে পারে, তা তিনি প্রমাণ করেছেন। প্রতিটি বিভাগের বিজয়ীরা ২৫০ মার্কিন ডলার এবং একটি ট্রফি পেয়েছেন, আর সামগ্রিক বিজয়ী ৫০০ মার্কিন ডলার, একটি ট্রফি এবং একটি মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম পেয়েছেন।
ডকুমেন্টারি (Documentary) বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন এমা বোয়েল (Emma Boyle)। তিনি ইস্তাম্বুলে তোলা ছবির একটি সিরিজ উপস্থাপন করেছেন, যেখানে শহরের পথকুকুর ও বিড়ালদের জীবন এবং তাদের সাথে স্থানীয় মানুষদের সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে। বোয়েলের এই প্রকল্পটি সেইসব দেশের পথপ্রাণীদের নথিভুক্ত করার একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, যেখানে তারা দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
এই বছর মোট আটটি বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে অ্যাকশন (Action), কেনাইন পোর্ট্রেট (Canine Portrait), ক্রিয়েটিভ (Creative), ডকুমেন্টারি (Documentary), ইকুইন পোর্ট্রেট (Equine Portrait), ফেলিন পোর্ট্রেট (Felin Portrait), ওপেন পোর্ট্রেট (Open Portrait) এবং পেট অ্যান্ড পিপল (Pets and People) উল্লেখযোগ্য। এই প্রতিযোগিতায় দুই-তৃতীয়াংশের বেশি এন্ট্রি পুরস্কৃত হয়েছে, যা এটিকে এখন পর্যন্ত আয়োজিত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিযোগিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এই প্রতিযোগিতা কেবল ফটোগ্রাফারদের নৈপুণ্যকেই তুলে ধরে না, বরং পোষা প্রাণীদের প্রতি মানুষের গভীর ভালোবাসা এবং তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে তাদের গুরুত্বকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। এই ছবিগুলো কেবল শিল্পকর্ম নয়, বরং আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা এই প্রাণীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শন। পোষা প্রাণীদের ছবি তোলার এই ধারাটি কেবল একটি বিনোদনমূলক মাধ্যমই নয়, বরং এটি প্রাণী কল্যাণ এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, পোষা প্রাণীদের ছবিগুলো সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যা প্রাণী দত্তক নেওয়া এবং তাদের সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। বিশেষ করে, উদ্ধার করা প্রাণীদের ছবিগুলো তাদের নতুন পরিবার খুঁজে পেতে সাহায্য করে, যা এই ধরণের প্রতিযোগিতার একটি মহৎ দিক। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পেট ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস বিশ্বজুড়ে ফটোগ্রাফারদের প্রাণীদের অনন্য সৌন্দর্য এবং চরিত্র অন্বেষণ ও প্রদর্শনে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। পোষা প্রাণীর ফটোগ্রাফি বাজার ২০২৪ সালে ১.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ছিল এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ২.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সুন্দর প্রাণীদের ছবি দেখলে মেজাজ এবং মনোযোগের উপর ইতিবাচক প্রভাবের কারণে কাজের উৎপাদনশীলতা ১০% বৃদ্ধি পেতে পারে।