গবেষকরা এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মডেল তৈরি করেছেন যা কুকুরের ডাক বিশ্লেষণ করে তাদের আবেগ এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতি শনাক্ত করতে পারে। এটি কুকুরের যোগাযোগের পদ্ধতি বোঝার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
ওয়েভটুভেক২ (Wav2Vec2) নামে পরিচিত এই এআই মডেলটি মূলত মানুষের কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা এটিকে কুকুরের ডাক প্রক্রিয়াকরণের জন্য অভিযোজিত করেছেন। বিভিন্ন প্রজাতি, বয়স এবং লিঙ্গের মোট ৭৪টি কুকুরের কণ্ঠস্বরের রেকর্ডিং ব্যবহার করে মডেলটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই রেকর্ডিংগুলিতে মালিকদের সাথে মিথস্ক্রিয়া এবং হতাশার মতো বিভিন্ন স্বাভাবিক পরিস্থিতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাথমিক পরীক্ষায় মডেলটি ৭০% এর বেশি নির্ভুলতা অর্জন করেছে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, আরও ডেটা এবং বিভিন্ন কুকুরের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই নির্ভুলতা বৃদ্ধি পাবে।
এই প্রযুক্তির অনেক ব্যবহারিক প্রয়োগ রয়েছে। এটি কুকুরের মানসিক চাপ শনাক্ত করতে এবং তাদের যত্ন উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। প্রশিক্ষণের সময়, কুকুরের মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে উদ্দীপনা সামঞ্জস্য করতে এটি সহায়ক হতে পারে। বাড়িতে, একটি সংযুক্ত ডিভাইস মালিকদের ব্যথা বা উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয় এমন ডাক সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে, যা বয়স্ক কুকুরদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।
এই এআই মডেলের একটি বিশেষ দিক হলো, এটি মানুষের কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণের জন্য তৈরি ওয়েভটুভেক২ (Wav2Vec2) মডেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন যে, মানুষের ভাষার জটিল প্যাটার্ন বোঝার জন্য প্রশিক্ষিত এই মডেলগুলো কুকুরের ডাকের মতো প্রাণীদের কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণেও অত্যন্ত কার্যকর। এমনকি, শুধুমাত্র কুকুরের ডাকের উপর প্রশিক্ষিত মডেলগুলোর তুলনায় এই পদ্ধতিটি বেশি নির্ভুল ফলাফল দিয়েছে, যা প্রমাণ করে যে মানুষের ভাষা প্রক্রিয়াকরণের কৌশলগুলো প্রাণীদের যোগাযোগের ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার আবেগ শনাক্তকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গরু ও শূকরের মতো প্রাণীদের কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ করে তাদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক আবেগ প্রায় ৯০% নির্ভুলতার সাথে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এই গবেষণাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, প্রাণীদের কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য বিবর্তনের ধারায় টিকে আছে, যা বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে যোগাযোগের একটি সার্বজনীন পদ্ধতি হতে পারে।
এই অগ্রগতি মানুষের সাথে তাদের প্রিয় কুকুরের বন্ধনকে আরও গভীর করার এবং তাদের চাহিদা ও অনুভূতিগুলোকে আরও ভালোভাবে বোঝার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত অর্জনই নয়, বরং আমাদের চারপাশের প্রাণীদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল এবং সচেতন হওয়ার একটি সুযোগ।