আধুনিক বিশ্বে সাইবার অপরাধের বিস্তার রোধে পুলিশ বাহিনী নতুন এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতির আশ্রয় নিচ্ছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, বিশেষ প্রশিক্ষিত কুকুরদের এখন লুকানো ইলেকট্রনিক ডিভাইস খুঁজে বের করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, যা অপরাধ তদন্তে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই প্রশিক্ষিত ক্যানাইন সদস্যরা সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
এই বিশেষ প্রশিক্ষিত কুকুরদের, যারা প্রায়শই ল্যাব্রাডর রিট্রিভার প্রজাতির হয়ে থাকে, তাদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরিতে ব্যবহৃত একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক যৌগ, ট্রাইফিনাইলফসফিন অক্সাইড (TPPO) শনাক্ত করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই যৌগটি ইউএসবি ড্রাইভ, এসডি কার্ড, হার্ড ড্রাইভ, স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ছোট ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। কুকুরদের এই বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠোর, যেখানে মাত্র প্রতি ৫০টি কুকুরের মধ্যে একটি এই কাজের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। তাদের প্রশিক্ষণে খাদ্য-ভিত্তিক প্রণোদনা ব্যবহার করা হয়, যেখানে তারা কেবল ডিভাইস খুঁজে পেলেই খাবার পায়, যা তাদের অনুসন্ধানী প্রবৃত্তিকে আরও তীক্ষ্ণ করে তোলে। এই প্রশিক্ষণ সাধারণত ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়, যা তাদের নির্ভুলতা নিশ্চিত করে।
এই ডিজিটাল ডিটেকশন ডগ বা ইলেকট্রনিক স্টোরেজ ডিটেকশন (ESD) কুকুরগুলি তদন্তকারীদের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। তারা এমন সব লুকানো ডিভাইস খুঁজে বের করতে পারে যা মানুষের চোখে বা সাধারণ অনুসন্ধানে এড়িয়ে যেতে পারে। যেমন, আসবাবপত্রের ভিতরে, বৈদ্যুতিক আউটলেটের পিছনে বা সিলিং-এর মতো কঠিন স্থানে লুকানো ডিভাইসগুলি তারা সহজেই শনাক্ত করতে পারে। এই কুকুরগুলি প্রায়শই এমন সব ডিভাইস খুঁজে বের করে যা তদন্তকারীরা কয়েক ঘণ্টা অনুসন্ধানের পরেও খুঁজে পাননি।
তাদের এই ক্ষমতা শিশু শোষণ, গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং অন্যান্য সাইবার অপরাধের মতো সংবেদনশীল মামলাগুলিতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে ডিজিটাল প্রমাণ অপরাধী সনাক্তকরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনায়, একটি ল্যাব্রাডর কুকুর একটি লুকানো ফ্ল্যাশ ড্রাইভ খুঁজে পেয়েছিল যা একটি হাই-প্রোফাইল মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করেছিল। এই বিশেষ প্রশিক্ষিত কুকুরদের ব্যবহার কেবল নির্দিষ্ট কিছু অপরাধেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সংগঠিত অপরাধ, মাদক চোরাচালান, এবং এমনকি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও সহায়ক হচ্ছে।
পুলিশ বাহিনী তাদের কার্যকারিতা উপলব্ধি করে এই ডিজিটাল সনাক্তকরণ কুকুর দলের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সাথে সাথে অপরাধীরাও তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে, এবং এই প্রশিক্ষিত কুকুরগুলি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এবং ডিজিটাল যুগে অপরাধ দমনে একটি অত্যাধুনিক সুবিধা প্রদান করছে। এই উদ্ভাবনী পদ্ধতিটি সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ডিজিটাল অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।