ইয়েকাতেরিনবুর্গে 'লাই-ফাই' প্রকল্পের আওতায় পথকুকুরেরা এখন চলন্ত ওয়াই-ফাই হটস্পট

সম্পাদনা করেছেন: Katerina S.

প্রকল্প 'Стенография'র প্রেস সার্ভিস থেকে ছবি।

ইয়েকাতেরিনবুর্গে এক অভিনব সামাজিক উদ্যোগ শুরু হয়েছে, যার নাম 'লাই-ফাই' প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে, পথকুকুরদের ব্যবহার করা হচ্ছে চলন্ত ওয়্যারলেস ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পয়েন্ট হিসেবে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা গৃহহীন পশুদের সমস্যাটির দিকে এবং তাদের জন্য নতুন পরিবার খুঁজে পেতে সহায়তা করা। বর্তমানে প্রায় পাঁচটির মতো কুকুর এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে, যারা শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। কুকুরগুলির গায়ে বিশেষভাবে তৈরি উজ্জ্বল কমলা রঙের ভেস্ট-ব্যাকপ্যাক লাগানো থাকে, যা পথচারীদের জন্য বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই সিগন্যাল তৈরি করে। কুকুরগুলির গতিবিধি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তত্ত্বাবধায়করা সর্বদা তাদের নজরে রাখেন।

এই 'লাই-ফাই' প্রকল্পটি একাধিক সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। এর মধ্যে রয়েছে আর্ট ফেস্টিভ্যাল 'স্টেনোগ্রাফিয়া', সৃজনশীল দল 'হট সিঙ্গেলস', দাতব্য তহবিল 'জুজাশ্চিতা', এবং আঞ্চলিক টেলিযোগাযোগ অপারেটর 'মোটিভ'। এই অংশীদারিত্বের ফলেই এমন একটি উদ্ভাবনী ধারণা বাস্তবে রূপ নিতে পেরেছে।

'স্টেনোগ্রাফিয়া' উৎসবটি ইয়েকাতেরিনবুর্গে ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং পশুসম্পর্কিত মানবিক উদ্যোগকে সমর্থন করার দীর্ঘ ইতিহাস তাদের রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে এই উৎসবের অংশ হিসেবে আহত পশুদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের জন্য একটি বিড়ালের ছবি সম্বলিত ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছিল। এটি প্রমাণ করে যে এই সংস্থাটি সর্বদা সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

অপারেটর 'মোটিভ'-এর প্রকৌশলীরা এমন কিছু ইলেকট্রনিক ব্যাকপ্যাক তৈরি ও সংযোজন করেছেন যা আকারে ছোট এবং কুকুরদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। কুকুরগুলি যখন শহরের মধ্যে চলাচল করে, তখন এই সরঞ্জামগুলি তাদের বহন করতে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করে না। উল্লেখ্য, 'মোটিভ' উরাল ফেডারেল ডিস্ট্রিক্টের অন্যতম প্রধান অপারেটর এবং এই অঞ্চলে তাদের নেটওয়ার্ক সবচেয়ে বিস্তৃত।

অন্যদিকে, ২০১৬ সালের শরৎকালে একদল ইয়েকাতেরিনবুর্গবাসীর দ্বারা নিবন্ধিত 'জুজাশ্চিতা' তহবিলটি প্রতিদিন অসহায় পশুদের সহায়তা করে চলেছে। তারা কেবল নতুন মালিক খুঁজতেই সাহায্য করে না, বরং পোষা প্রাণীর প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাব গঠনেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই সংস্থার প্রচেষ্টাগুলি স্থানীয় পশুপ্রেমী মহলে বিশেষভাবে প্রশংসিত।

'হট সিঙ্গেলস'-এর শিল্পীরা মনে করেন যে তাদের কাজ হলো একটি আধুনিক চাহিদা—ইন্টারনেট অ্যাক্সেস—পূরণের মাধ্যমে মানুষ ও কুকুরের মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করা। এইভাবে, ইয়েকাতেরিনবুর্গের কুকুরগুলি একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতির মাধ্যমে আধুনিক নগর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে অংশ নিচ্ছে। এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত প্রদর্শনী নয়, বরং একটি সামাজিক বার্তা বহন করে।

প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য প্রযুক্তিগত না হয়ে বরং সম্পূর্ণ সামাজিক। আয়োজকরা চান যে মানুষ যেন 'সহানুভূতির ক্লান্তি' কাটিয়ে উঠতে পারে। তারা এমন একটি ইন্টারেক্টিভ উপায় প্রস্তাব করছেন যার মাধ্যমে গৃহহীন পশুদের সঙ্গে মানুষ সহজে মিশতে পারবে। রাস্তায় কমলা রঙের সরঞ্জাম পরিহিত কোনো কুকুরকে দেখলে সম্ভাব্য মালিকেরা থমকে দাঁড়াতে পারেন এবং প্রাণীটিকে ভবিষ্যতের সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। যে কোনো নাগরিক যদি প্রকল্পের অংশ নেওয়া কোনো কুকুর বা 'জুজাশ্চিতা' তহবিলের অন্য কোনো পোষ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে আগ্রহী হন, তবে তাদের প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।

যারা এই উদ্যোগের অংশ নেওয়া কোনো কুকুরকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন, তাদের জন্য একটি বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নতুন মালিক 'মোটিভ' অপারেটরের কাছ থেকে এক বছরের জন্য সীমাহীন বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার প্রণোদনা, যা শুধু একটি প্রাণীর জীবনই বদলে দেবে না, বরং নতুন মালিককেও আধুনিক জীবনযাত্রার সুবিধা দেবে।

উৎসসমূহ

  • Рамблер

  • Моменты

  • Уральский меридиан

  • Лента новостей Екатеринбурга

  • Ведомости Урал

  • 66.RU

  • Лай-фай

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।