স্পার্ম তিমির কণ্ঠে মানুষের স্বরবর্ণের অনুরূপ ধ্বনি বিন্যাস উন্মোচন
সম্পাদনা করেছেন: Vera Mo
প্রজেক্ট সিটিই (Project CETI) এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে কর্তৃক পরিচালিত একটি গবেষণা গত ১২ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে স্পার্ম তিমির যোগাযোগের মধ্যে মানুষের স্বরবর্ণ (vowels) এবং দ্বিস্বরধ্বনির (diphthongs) অনুরূপ স্পেকট্রাল বিন্যাস শনাক্ত করা হয়েছে। এই আবিষ্কার সামুদ্রিক প্রাণীর যোগাযোগের জটিলতা সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে পরিবর্তন করতে পারে, কারণ পূর্বে গবেষকরা তিমির যোগাযোগকে অনেকটা মোর্স কোডের মতো সরল মনে করতেন।
এই গবেষণায় তিমির কোডা স্তরে দুটি সুনির্দিষ্ট বিন্যাস পাওয়া গেছে: 'এ-কোডা স্বরবর্ণ' (a-coda vowel) এবং 'ই-কোডা স্বরবর্ণ' (i-coda vowel)। তিমিরা সুসংগঠিত কথোপকথনে এই স্বরবর্ণগুলো আদান-প্রদান করে। এছাড়াও, ক্রমবর্ধমান, হ্রাসমান ও সম্মিলিত কম্পাঙ্কের সমন্বয়ে গঠিত বেশ কিছু 'দ্বিস্বরধ্বনির মতো' বিন্যাসও নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই ধ্বনি বিন্যাসগুলো মানুষের বর্ণমালা ব্যবহার করে প্রতিলিপি করার মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন সময়ের পার্থক্যের বিষয়টি সমন্বয় করা হয়, যা যোগাযোগ ব্যবস্থার গভীরতা নির্দেশ করে।
গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রজেক্ট সিটিই-এর ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান, গাস্পার বেগুশ, যিনি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-এর সহযোগী অধ্যাপক। তিনি উল্লেখ করেছেন যে ভাষাগত দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের স্বরবর্ণ ব্যবস্থার সঙ্গে এই সাদৃশ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রজেক্ট সিটিই হলো একটি অলাভজনক সংস্থা যা উন্নত মেশিন লার্নিং এবং রোবোটিক্স ব্যবহার করে পূর্ব ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত ডমিনিকার উপকূলে স্পার্ম তিমির যোগাযোগ নিয়ে গবেষণা করে।
প্রজেক্ট সিটিই-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, ডেভিড গ্রুবার, যিনি সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কের একজন বিশিষ্ট অধ্যাপক, তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে স্পার্ম তিমিরা স্বরবর্ণ উৎপাদনের জন্য 'সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি পদ্ধতি' বিবর্তিত করেছে। সিটিই-এর বিজ্ঞান দলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সামুদ্রিক জীববিদ্যা, ক্রিপ্টোগ্রাফার এবং রোবোটিক্স বিশেষজ্ঞসহ ৫০ জনেরও বেশি বিজ্ঞানী অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। গবেষকরা পূর্বে তিমির ক্লিক বা উচ্চ-কম্পাঙ্কের স্পন্দন এবং তাদের মধ্যবর্তী সময়কালের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন, যেখানে প্রজেক্ট সিটিই পূর্বে তিমির শব্দ ব্যবস্থায় ১৫৬টি ক্লিক বিন্যাস আবিষ্কার করেছিল।
বেগুশ উল্লেখ করেছেন যে তিমির 'এ-স্বরবর্ণ' এবং 'ই-স্বরবর্ণ' উৎপাদন সম্ভবত নিয়ন্ত্রিত, এবং এই ধ্বনিগুলো তিমিরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি করে ও তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। এই গবেষণাটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো যখন মানব-সৃষ্ট শব্দ দূষণ এবং জাহাজের আঘাতের কারণে প্রতি বছর তিমিদের ওপর চাপ বাড়ছে, যা এই প্রাণীদের সংরক্ষণ এবং তাদের যোগাযোগের গভীরতা বোঝার প্রয়োজনীয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই গবেষণার পদ্ধতিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল, বিশেষত জেনারেটিভ অ্যাডভারসারিয়াল নেটওয়ার্ক (GANs) ব্যবহার করে সম্পন্ন হয়েছে, এবং এটি ওপেন মাইন্ড জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
উৎসসমূহ
Benzinga
National Geographic
Project CETI
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
