আইআইটি বোম্বেতে ভারতজেন প্রদর্শন: সার্বভৌম এআই উদ্যোগের অগ্রগতি পর্যালোচনা

২০২৫ সালের ২৫শে নভেম্বর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডঃ জিতেন্দ্র সিং, ভারতীয় প্রযুক্তিকেন্দ্র বোম্বে (আইআইটি বোম্বে)-তে ভারতের প্রথম সার্বভৌম বৃহৎ ভাষা মডেল (LLM) উদ্যোগ 'ভারতজেন'-এর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। এই জাতীয় সম্পদ হিসেবে এআই মডেলের কার্যকারিতা প্রদর্শন করেন ভারতজেন-এর অধ্যাপক-ইন-চার্জ, অধ্যাপক গণেশ রামকৃষ্ণণ। এই পর্যালোচনাটি দেশের প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভারতজেন এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে এটি ভারতের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বৈচিত্র্য এবং ২২টিরও বেশি ভারতীয় ভাষাকে প্রতিফলিত করতে পারে। এই মডেলটি পাঠ্য, বক্তৃতা এবং ডকুমেন্ট ভিশন—এই তিনটি প্রধান মাধ্যমকে একীভূত করে, যা ভারতীয় নাগরিকদের স্বাভাবিক যোগাযোগের ধরনে তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম করে তোলে। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রযুক্তিকে ভারতের নিজস্ব শক্তিতে প্রোথিত করার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

এই জাতীয় উদ্যোগটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (DST) ন্যাশনাল মিশন অন ইন্টারডিসিপ্লিনারি সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেমস (NM-ICPS)-এর অধীনে আর্থিক সহায়তা লাভ করেছে। NM-ICPS, যা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল, প্রাথমিকভাবে ₹৩৬৬০ কোটি টাকার একটি তহবিল নিয়ে পাঁচ বছরের জন্য বাস্তবায়িত হচ্ছে। আইআইটি বোম্বেতে অবস্থিত টেকনোলজি ইনোভেশন হাবের মাধ্যমে এই প্রকল্পে ₹২৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক (MeitY) ইন্ডিয়া এআই মিশনের অধীনে অতিরিক্ত ₹১,০৫৮ কোটি টাকার সমর্থন নিশ্চিত করেছে।

পর্যালোচনার সময় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মডেল উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে পারাম-১, যা একটি ভিত্তিগত পাঠ্য মডেল। এই মডেলটির প্যারামিটার সংখ্যা ২.৯ বিলিয়ন এবং এটি ৭.৫ ট্রিলিয়ন টোকেনের উপর প্রশিক্ষিত, যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি ডেটা ভারতীয় বিষয়বস্তু দ্বারা গঠিত। এছাড়াও, শ্রুতিম নামে একটি ৩০-মিলিয়ন-প্যারামিটার স্বয়ংক্রিয় বক্তৃতা শনাক্তকরণ (ASR) সিস্টেম এবং নয়টি ভারতীয় ভাষায় উপলব্ধ সূক্তম নামে একটি ১৫০-মিলিয়ন-প্যারামিটার টেক্সট-টু-স্পিচ (TTS) মডেল প্রদর্শন করা হয়। ভারতের প্রথম ডকুমেন্ট-ভিশন মডেল, পত্রম, সাত বিলিয়ন প্যারামিটার নিয়ে গঠিত এবং এটি ২.৫ বিলিয়ন টোকেনের উপর প্রশিক্ষিত, যা ভারতীয় বিন্যাসে থাকা নথি ব্যাখ্যা করার লক্ষ্য রাখে। এই প্রযুক্তির ব্যবহারিক দিক তুলে ধরতে কৃষকদের জন্য একটি ভয়েস-সক্ষম হোয়াটসঅ্যাপ টুল, কৃষি সাথী-এর একটি প্রুফ-অফ-কনসেপ্ট অ্যাপ্লিকেশন প্রদর্শন করা হয়।

এই প্রকল্পের একটি অপরিহার্য অংশ হলো ভারত ডেটা সাগর, যা ভারতের ডিজিটাল জ্ঞান সম্পদের উপর সম্পূর্ণ মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা ডিজিটাল সার্বভৌমত্বকে দৃঢ় করে। এই ভারতজেন উদ্যোগে আইআইটি মাদ্রাজ, আইআইআইটি হায়দ্রাবাদ এবং আইআইটি কানপুরের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলি কনসোর্টিয়াম কাঠামোতে অংশীদার হিসেবে যুক্ত রয়েছে, যা সম্মিলিত গবেষণা ও উন্নয়নের একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে।