হ্যানয়েতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক যুগান্তকারী সেমিনারে ভিয়েতনাম জুড়ে পরিবেশ-বান্ধব স্কুলগুলির প্রসারের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। "প্লাস্টিক-মুক্ত স্কুল: সবুজ প্রজন্মের জন্য পদক্ষেপ" শীর্ষক এই আয়োজনটি টেকসই শিক্ষার প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও প্লাস্টিক দূষণের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভিয়েতনামের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরেছে।
অধ্যাপক ডাং থি কিম চি উল্লেখ করেছেন যে, "সবুজ-পরিষ্কার-সুন্দর স্কুল" থেকে "ইকো-স্কুল" মডেলে উত্তরণ একটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ। এই নতুন মডেলে টেকসই ভোগ এবং বৃত্তাকার অর্থনীতির নীতিগুলিকে একীভূত করা হয়েছে, যা পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এই পরিবর্তন ভিয়েতনামের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবেশ-সচেতনতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
হুয়ের থং নাথট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ, মিসেস নুয়েন থি লিinh চি, তাঁর বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এই বিদ্যালয়টি প্লাস্টিক বর্জ্য কমাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। বিদ্যালয়ের সবুজ ক্লাব এবং সৃজনশীল পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরিবেশ-বান্ধব কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে এবং এই সচেতনতা তাদের পরিবার ও বৃহত্তর সম্প্রদায়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে, স্কুলগুলি কেবল শিক্ষার কেন্দ্রই নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তনেরও অনুঘটক হতে পারে।
ইউএনআইসিইএফ-এর মিস লে আনহ ল্যান জোর দিয়ে বলেছেন যে, শিক্ষার্থীদের আচরণে পরিবর্তন আনার জন্য শিক্ষক এবং প্রশাসকদের ভূমিকা অপরিহার্য। ইউএনআইসিইএফ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে জলবায়ু-অভিযোজী স্কুল মডেল এবং শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত পরিবেশগত উদ্যোগের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। স্থপতি হোয়াং থুক হাও আরও যোগ করেছেন যে, বিদ্যালয়ের নকশায় প্রকৃতির সংমিশ্রণ পরিবেশ-বান্ধব মানসিকতা তৈরিতে সহায়ক।
সেমিনারে সীমিত সম্পদের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষার্থীদের নাইলনের ব্যবহার কমানোর মতো বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিশেষজ্ঞরা এই পরিবর্তনগুলি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে স্কুলগুলিকে সহায়তা করার জন্য সুনির্দিষ্ট সমাধান প্রদান করেছেন। এই সেমিনারটি একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে, ইকো-স্কুলগুলিকে একটি বাস্তব কার্যক্ষম মডেলে পরিণত করতে হবে, যা দৈনন্দিন শিক্ষা, শিখন এবং সম্প্রদায়িক অংশগ্রহণের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত থাকবে।
এই উদ্যোগটি ভিয়েতনামের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই শিক্ষাগত অনুশীলনকে শক্তিশালী করার পথে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। ভিয়েতনামের প্রায় ২.৮৯ মিলিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী রয়েছে, যা দেশের জনসংখ্যার ২.৮৪%। এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পরিবেশ-বান্ধব আচরণে উদ্বুদ্ধ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। এছাড়াও, ভিয়েতনামের জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা (NAPCE) ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বৃত্তাকার অর্থনীতির নীতিগুলিকে একীভূত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যা টেকসই উৎপাদন ও ভোগের মডেলগুলির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।