রাজস্থান রাজ্যপাল আধুনিক শিক্ষায় প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সওয়াল

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে, রাজস্থানের রাজ্যপাল হরিবাবু কিষাণরাও বাগদে মহারানা প্রতাপ কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (MPUAT) একটি পর্যালোচনা বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কাঠামো, ভর্তি প্রক্রিয়া, বৃত্তি, পরীক্ষা পদ্ধতি, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, কর্মী নিয়োগ এবং ভূমি ব্যবহারের মতো বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখেন এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন।

রাজ্যপাল হরিবাবু কিষাণরাও বাগদে তাঁর ভাষণে প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান ও ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ের উপর বিশেষ জোর দেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে ভারতের সমৃদ্ধ প্রাচীন জ্ঞানভাণ্ডারকে গবেষণা ও শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করলে শিক্ষার্থীদের মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ ও আত্মপরিচয় আরও দৃঢ় হবে। এই প্রসঙ্গে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে মহর্ষি ভরদ্বাজের মতো প্রাচীন ঋষিদের রচিত গ্রন্থাবলী সহজলভ্য করার প্রস্তাব দেন। মহর্ষি ভরদ্বাজ ছিলেন একজন প্রখ্যাত বৈদিক ঋষি ও পণ্ডিত, যিনি বেদ, আয়ুর্বেদ, ব্যাকরণ, অর্থনীতি এবং যুদ্ধবিদ্যার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীর জ্ঞান রাখতেন। তাঁর রচিত বিভিন্ন শাস্ত্র, যেমন আয়ুর্বেদ-সংহিতা, ভরদ্বাজ সংহিতা এবং ধনুर्वेद, আজও অমূল্য জ্ঞান ধারণ করে আছে। এই প্রাচীন জ্ঞান শুধু ভারতেরই নয়, বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।

রাজ্যপালের এই আহ্বান ভারতের সামগ্রিক জ্ঞান ব্যবস্থা (Indian Knowledge Systems - IKS) কে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার বৃহত্তর প্রচেষ্টারই অংশ। প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান শুধু আধ্যাত্মিক বা দার্শনিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির মতো আধুনিক ক্ষেত্রগুলিতেও এর গভীর প্রভাব রয়েছে। এই জ্ঞান নতুন প্রজন্মের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশে সহায়ক হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিষয়গুলি পর্যালোচনার পাশাপাশি, রাজ্যপাল বাগদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য গল্প ও অনুপ্রেরণামূলক কাহিনির মাধ্যমে তাদের যুক্ত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, এই কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের যুক্ত করা যেতে পারে। তাঁর এই ভাবনা জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) -এর সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা স্থানীয় ঐতিহ্য ও প্রাচীন জ্ঞানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযোগ স্থাপনের উপর জোর দেয়। রাজ্যপাল বাগদে বিশ্বাস করেন যে আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে প্রাচীন প্রজ্ঞার মেলবন্ধন একটি সুষম ও প্রগতিশীল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। মহারানা প্রতাপ কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান ও ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন এবং আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে এর একীকরণ এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এটি শিক্ষার্থীদের কেবল জ্ঞানার্জনেই সাহায্য করবে না, বরং তাদের মধ্যে দেশপ্রেম, আত্মবিশ্বাস এবং বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার প্রেরণা যোগাবে।

উৎসসমূহ

  • NewsDrum

  • PTI News

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।