একটি যুগান্তকারী গবেষণা, যা ২৫শে আগস্ট, ২০২৫ তারিখে নেচার নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে, ইঙ্গিত দেয় যে মস্তিষ্কের শরীরের প্রতিনিধিত্ব অঙ্গহানির পরেও আগের চেয়ে অনেক বেশি স্থিতিশীল। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা, ডঃ ট্যামার মাকিন-এর নেতৃত্বে, হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া তিন ব্যক্তির উপর এই গবেষণা পরিচালনা করেন। ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (fMRI) ব্যবহার করে, তারা দেখতে পান যে অনুপস্থিত হাতের মস্তিষ্কের মানচিত্র সময়ের সাথে সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে, যা মস্তিষ্কের ব্যাপক পুনর্গঠনের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।
পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণার প্রধান লেখক ডঃ হান্টার শোন বলেছেন, “মস্তিষ্কের শরীরের মানচিত্র সংবেদী কর্টেক্সে বা সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে অত্যন্ত সংরক্ষিত থাকে, এমনকি সংবেদী ইনপুটের একটি অত্যন্ত নাটকীয় পরিবর্তন সত্ত্বেও যা মস্তিষ্কে ফিরে যায়।” এটি হারানো অঙ্গের একটি স্থিতিশীল স্নায়বিক প্রতিনিধিত্ব নির্দেশ করে। এই ফলাফলগুলি উন্নত কৃত্রিম অঙ্গ তৈরির ক্ষেত্রে এবং ফ্যান্টম অঙ্গের ব্যথা চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
সংরক্ষিত স্নায়বিক মানচিত্রগুলি ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেসের মাধ্যমে কৃত্রিম অঙ্গের উন্নত নিয়ন্ত্রণ সহজতর করতে পারে। অতিরিক্তভাবে, গবেষণাটি অঙ্গচ্ছেদের পরে মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়ে ফ্যান্টম অঙ্গের ব্যথার জন্য আরও কার্যকর থেরাপির দিকে পরিচালিত করতে পারে। এই স্থিতিশীলতা কয়েক দশক পরেও অনুপস্থিত হাতের অক্ষত স্নায়বিক উপস্থাপনা দেখানোর পূর্ববর্তী গবেষণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে। এটি দেখায় যে মস্তিষ্ক কেবল পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে খাপ খায় না, বরং এটি তার অভ্যন্তরীণ কাঠামো বজায় রাখতেও সক্ষম। এই স্থিতিশীলতা ফ্যান্টম অঙ্গের ব্যথা উপশমের জন্য নতুন পদ্ধতির পথ খুলে দিতে পারে, যেখানে মস্তিষ্কের এই অপরিবর্তিত মানচিত্রগুলিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এছাড়াও, এটি কৃত্রিম অঙ্গ প্রযুক্তির উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যেখানে মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেসের মাধ্যমে আরও উন্নত এবং স্বাভাবিক কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করা সম্ভব হবে। এই গবেষণাটি প্রমাণ করে যে, শারীরিক পরিবর্তনের মুখেও মস্তিষ্ক তার মৌলিক কাঠামো ধরে রাখতে পারে, যা মানব শরীরের অভিযোজন ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও গভীর করে।